চলমান শৈত্য প্রবাহে শীতকালের পৌষ মাসের শুরুতেই শীতে কাঁপছে দেশের উত্তরাঞ্চলের ভারত সীমান্তবর্তী শেরপুর জেলার গারো পাহাড়ী জনপদ নালিতাবাড়ীর মানুষ। শীতের সাথে পালা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে শৈত্য প্রবাহ ও কনকনে ঠান্ডা। শীতের কারনে শিশু ও বয়স্ক মানুষরা জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছেন।
দরিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী এখানকার অধিকাংশ অধিবাসীরা প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে অতিকষ্টে রয়েছেন। বিশেষ করে পাহাড়ের অভ্যন্তরে ও পাদদেশে বসবাসকারী মুসলিম স¤প্রদায়সহ ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠীর গরো-কোচ স¤প্রদায়ের মানুষের শীতের কারনে তাদের কষ্ট বেড়েছে দ্বিগুন। কনকনে ঠান্ডা হিমবায়ুর কারনে কাবু হচ্ছে এলাকার মানুষ। এ থেকে বাদ পড়ছেনা গবাদি পশু প্রাণিও। এসব গবাদি পশুকে শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচাতে চটের বস্তা বা কাপড় মুড়িয়ে দিতে হচ্ছে।
গত কয়েকদিন ধরে উপজেলার সমেশ্চুড়া, মধুটিলা, বুরুঙ্গা, খলচান্দা, বারোমারী, কালাপানি, দাওধারা, কাটাবাড়ি, হাতিপাগার, নাকুগাঁও, কালাকুমা, তারানী, পানিহাটা ও মায়াঘাসী। এ পাহাড়ী পলীগুলোতে চলছে কনকনে শীতের মহড়া। উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের হিমালয় পর্বতের হিমবায়ু আর ঘন কুয়াশায় জেঁকে বসেছে প্রচন্ড শীত। এখানকার খেটে খাওয়া ছিন্নমুল মানুষগুলো প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন।
নালিতাবাড়ী উপজেলার আন্ধারুপাড়া গ্রামের গারো আদিবাসী নেত্রী জস্টিনা চিরান (৪০) জানান, দিন দিন শীত বাড়ছে। প্রচন্ড শীতের কারনে সীমান্ত এলাকার গারো আদিবাসীরা শীতে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। প্রতিবছর এভাবেই শীতের সঙ্গে লড়াই করে তাদের বেঁচে থাকতে হয়। এতে পাহাড়ি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা হয়ে পড়ে বিপর্যস্ত। এসব অঞ্চলের শীতার্ত মানুষ পাহাড় থেকে লাকড়ি ও খরকুটা সংগ্রহ করে তা জ্বালিয়ে আগুন দিয়ে শরীর ছেঁকে শীত নিবারণের চেষ্টা করেন।
পলাশীকুড়া গ্রামের শ্রমিক গিয়াস উদ্দিন (৪৬) বলেন, ভিতর এলাকার চেয়ে সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় শীত পড়ে বেশি। সেই হিসেবে গরীব মানুষ সরকারিভাবে তেমন কোন শীতবস্র পায় না।
শেকেরকুড়া গ্রামের সুলতান আহমেদ (৪৬) বলেন, এবার শীত মৌসুমের শুরুতেই সমতলের চেয়ে সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় শীত পড়েছে বেশি। বেলা ১০টার আগে সুর্যের দেখা পাওয়া যায় না। এলাকার গরীব মানুষ পর্যাপ্ত শীতবস্রের অভাবে রাত জেগে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছে।
বর্তমানে শীত নিবারনের জন্য মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ লেপ-তোষকের দোকানে ভীড় করছেন। ছিন্নমুল আর গরীব মানুষগুলো ভীড় করছেন পুরাতন গরম কাপড়ের দোকানে। হত দরিদ্র মানুষেরা সব চেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন।
অন্যদিকে, নালিতাবাড়ী উপজেলা হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ইফরিত আরা ফাগুন বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুর রহমান জানান, সরকারীভাবে এ উপজেলায় ৬ হাজার ৬৮০টি কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এসব কম্বল দ্রুত বিতরন করার জন্য তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।