শেরপুর জেলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে ভারত সীমান্তঘেষা গারো পাহাড়ের হারিয়াকোনা গ্রাম। গ্রামটি শ্রীবরদী উপজেলার সিংগাবরুনা ইউনিয়নে অবস্থিত। ওই গ্রামে বাস করে ১৫০ পরিবার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ। এদের অধিকাংশই খেটে খাওয়া হত-দরিদ্র। অনেকেই দিন আনে দিন খায়। বড়দিন এদের কাছে সাধারন দিনের মতোই।
তাই এই গ্রামের দরিদ্র খ্রিস্টান স¤প্রদায়ের মানুষের সাথে বড় দিন উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) প্রথম প্রহরে দুর্গম পাহাড়ী পথে সিএনজি চালিত অটোরিকশা করে হঠাৎ সেই গ্রামে উপস্থিত হলেন শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম। তার সঙ্গে ছিল বড় আকারের দুইটি কেক। একটি কেকে লেখা রয়েছে “ বড়দিনের শুভেচ্ছা- অভিনন্দন, জেলা পুলিশ শেরপুর। অপরটিতে লেখা কমিউনিটি পুলিশ এর পক্ষ থেকে “খ্রিস্টান সম্প্রদায়কে প্রাণঢালা ভালবাসা।”
এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস, শ্রীবরদী থানার ওসি মো. রহুল আমিন, জেলা ও উপজেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের নেতৃবৃন্দ তার সাথে ছিলেন।
হারিয়াকোনা চার্চের সামনে তখন চলছিল বড়দিনের কীর্ত্তণ। নানা বয়সী প্রায় দুই- আড়াই শতাধিক খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী সেই কীর্ত্তণে যোগ দিয়েছিল। হঠাৎ এসপি সাহেব আসার খবর পেয়ে মূহুর্তের মধ্যে কীর্ত্তণ বন্ধ হয়ে গেলো। শিশু, যুবক, কিশোর কিশোরী সবাই তাকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা।
আদিবাসী নেতা প্রাঞ্জল সাংমা বললেন, আমরা অভিভুত। স্বাধীনতার ৪৮ বছরে কোন এসপি আমাদের খোঁজ নেয়নি। আজ আমরা ধন্য।”
পুলিশ সুপারকে শুভেচ্ছা জানাতে এসে হারিয়াকোনা চার্চের প্রধান পুরোহিত এলিও ম্রং বললেন “ বড়দিনের শুভেচ্ছা জানাতে রাতের প্রথম প্রহরে আমাদের মাঝে কোন এসপি এসেছে আমি তা দেখিনি। দুর্গম পাহাড়ী ও ভীষণ ঠান্ঠা উপেক্ষা করে তিনি এসেছেন। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। উনাকে অভিনন্দন জানানোর ভাষা আমার জানা নেই।”
পরে ঠিক রাত ১২টা ১ মিনিটে কেক কেটে বড়দিনের উদ্বোধন করা হলো। উপস্থিত শিশু- কিশোর- কিশোরীরা গেয়ে উঠলো “হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ, “হ্যাপি বার্থ ডে টু ইউ, হ্যাপি বার্থ ডে ডিয়ার যিশু “শুভ শুভ জন্মদিন মহান যিশুর জন্মদিন। ”এসময় হারিয়াকোনা চার্চে নাচে গানে এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশের সৃষ্টি হলো। পুলিশ সুপার কেক কেটে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ও শিশুদের মুখে কেক তুলে দিলেন।
পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম পিপিএম বলেন “একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি দেখে যেতে পারেননি। তাঁর কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতার সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে চলেছেন। তাই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে, সেই সাথে পুলিশের একজন গর্বিত সদস্য হিসেবে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ যাতে আনন্দের সাথে, নিশ্চিন্তে, নির্বিঘ্নে বড়দিন পালন করতে পারে। সেজন্য আমরা পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে সামান্য উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা বড়দিনের প্রথম প্রহরে জেলার ২৯টি গীর্জা ও চার্চে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কেক কাটার কর্মসূচী পালন করছি। এতে একদিকে সবাই মিলে উৎসবে শরিক হচ্ছি। অন্যদিকে সম্পূর্ণ নিরাপদে, নিশ্চিন্তে খ্রিস্টান সম্প্রদায় বড়দিন পালন করছে। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা।