প্রকৃতিতে রহস্যের কমতি নেই। নানা ধরনের ঘোর টেপে নিজেকে সে আগলে রাখে। কিছু রহস্যের সমাধান মানুষ নিজেই করতে পারে আর কিছু অমীমাংসিতই থেকে যায়। জীবনধারাবিষয়ক ওয়েবসাইট ব্রাইটসাইডের সৌজন্যে থাকছে সে ধরনের পাঁচটি রহস্যময় ঘটনা, যার বিজ্ঞানীরা এখনো কোনো কূল-কিনারা করতে পারেননি।
১. নাচের মহামারী
ঘটনাটি ১৫১৮ সালের জুলাই মাসের। মিসেস ত্রোফফেয়া নামের এক নারী হঠাৎ নাচতে শুরু করেন। তার নাচ কিছুতেই থামছিল না। এক সপ্তাহ পর আরো ৩৪ জন ব্যক্তি তার সঙ্গে নাচে। এক মাস পর শত শত লোক সেই অবিরাম নাচে যোগ দেয়। যাদের মধ্যে ক্লান্তি, হার্ট অ্যাটাক ও উচ্চ রক্তচাপে প্রাণ হারায় প্রায় ৪০০ জন। এক মাস ধরে অবিরাম নাচতে থাকা কোনো ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই এর যথাযথ ব্যাখ্যাও বিজ্ঞানীরা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
২. সময় ভ্রমণকারী
২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির জন্য আন্ড্রু কার্লসসিন নামের এক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তিনি শেয়ারবাজারে ১২৬টি ঝুঁকিপূর্ণ লেনদেন করেন। এর মাধ্যমে তার আয় মাত্র ৮০০ মার্কিন ডলার থেকে ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছায়। এফবিআইর হাতে আটক হওয়ার পর অ্যান্ড্রু দাবি করেন, তিনি একজন সময় ভ্রমণকারী। ২২৫৬ সালের পৃথিবী থেকে তিনি সময় ভ্রমণকারী যানে চেপে ২০০৩ সালে পৌঁছেছেন। তাই তিনি অতীত থেকে তথ্য পান। অবশ্য আন্ড্রুর এ বক্তব্য মার্কিন আদালতে ধোপে টিকেনি। আদালতের রায়ে তার জেল হয়। কিছুদিন পর নিজের কথার সত্যতা প্রমাণ দিয়ে কঠোর নজরদারির জেল থেকে বেমালুম হাওয়া হয়ে যান এই সময় ভ্রমণকারী।
৩. ব্রালরনে জাদুঘরের ছবি
১৯৪১ সালে কানাডার গোল্ড ব্রিজ থেকে একটি ছবি তোলা হয়। সেই ছবিতে একজন ব্যক্তিকে দেখা যায়, যার পোশাক-আশাক মোটেও ১৯৪১ সালের মতো নয়, বরং বর্তমান সময়ের। তার পরনে ছিল একটি চেন লাগানো হুডি, টি-শার্ট এবং সবচেয়ে আশ্চর্য হওয়ার বিষয় ছিলো ওই সময়ে তার হাতে ছিল একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা।
৪. হিমায়িত বালিকা
হলিউডের ফ্রোজেন চলচ্চিত্রের এলসা ও আন্নাকে নিশ্চয়ই ভুলে যাননি। এলসার কারণে বরফে জমে যাওয়া আন্নাকে ভালোবাসা দিয়ে সারানো হয়। এবার বাস্তবের আন্নাকেই খুঁজে পাওয়া গেছে। নাম জিন হিলিয়ার্ড। ঘটনাটি ১৯৮০ সালের ২০ ডিসেম্বরের। ওই দিন জিন হিলিয়ার্ড তার গাড়ি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটার লেংবাইয়ের তুষার পড়া রাস্তা ধরে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির কাছাকাছি হঠাৎ তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, গাড়ি চালানো থামিয়ে তুষার পড়া রাস্তায় একটু হেঁটে বেড়াবেন। এরপর বাড়ির লোকেরা যখন তাকে খুঁজে পায়, তখন তিনি অচেতন অবস্থায় ছয় ঘণ্টা ধরে তুষার পড়া রাস্তায় পড়ে আছেন। সে সময় তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফারেনহাইটে যা হিসাব করলে দাঁড়ায় মাইনাস ৭.৬ ফারেনহাইট। যখন তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়, তখন তার মধ্যে বেঁচে থাকার কোনো লক্ষণ ছিল না। তুষারে থাকায় তার চামড়া এতটাই শক্ত হয়ে গিয়েছিল যে, শরীরে ইনজেকশন দিতে পারছিলেন না চিকিৎসকরা। সবাই ভেবেছিলেন, জিন মারা গেছে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনদিন পরে হাত-পা নাড়াতে শুরু করে। ছয় সপ্তাহ পড়ে সবার চোখের সামনে দিয়ে দিব্যি হেঁটে বাসায় ফিরেন জিন হিলিয়ার্ড।
৫. বৃষ্টি মানব
সময়টা ১৯৮৩ সাল। যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার স্ট্রাউডসবার্গ নিবাসী ডন ডেকারের দাদা কিছুদিন আগেই মারা গেছেন। তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠান শেষে ভারাক্রান্ত ডন বাড়ি ফিরে আসেন। বাড়িতে ফেরার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির ছাদ ও দেয়ালজুড়ে বৃষ্টির মতো পানি পড়া শুরু করে। অথচ বাড়ির ছাদ বা দেয়ালে কোনো পানির পাইপ সংযুক্ত ছিল না। সমস্যা সমাধানের জন্য ডনের বন্ধু ডাকে পুলিশ। পুলিশের সহায়তায় বাড়ির কাছের পিৎজা রেস্টুরেন্টে ডনকে নিয়ে যাওয়া হয়।
কিন্তু আশ্চর্যজন বিষয় ছিলো, বাড়ির বৃষ্টি ডন বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে থেমে যায়। ডনের বন্ধু ও পুলিশ আরো অবাক হয় যখন তারা দেখতে পায়, পিৎজার রেস্টুরেন্টে ডনের ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার দেয়াল ও ছাদজুড়ে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এ ঘটনার ব্যাখ্যা বিজ্ঞানীদের আজো জানা নেই।