শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে জ্বর, সর্দি-কাশি ও গলাব্যথার প্রকোপ। এতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অভ্যন্তরীণ-বহির্বিভাগে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। করোনাকালে এসব উপসর্গ দেখা দেওয়ায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ জ্বরে আক্রান্ত বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
তবে চিকিৎসকরা চিকিৎসাপত্রে এ ধরনের রোগীদের করোনা পরীক্ষার উপদেশ দিলেও দুই-একজন পরীক্ষা করে, অন্যরা নমুনা না দিয়েই বাড়িতে চলে যায়। নমুনা পরীক্ষায় বেশিরভাগের কভিড-১৯ নেগেটিভ হলেও দুয়েকজনের পজিটিভ এসেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মনিরুজ্জামান।
তিনি বলেন, হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে করোনার উপসর্গ থাকলেও কিছুতেই মানতে চান না, তারা করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন। এভাবেই জ্বরে আক্রান্ত রোগীরা করোনা পরীক্ষায় একেবারেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এখানে প্রতিদিন গড়ে ২৫০ রোগী বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়ে থাকে। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। বর্তমানে হাসপাতালে জ্বর, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৫ জন পুরুষ ও ১৩ জন মহিলা রোগী ভর্তি আছেন। এছাড়া এ উপজেলায় এ পর্যন্ত ৭৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৭। তন্মধ্যে একজন শেরপুর সদর হাসপাতাল, একজন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, একজন সুলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। অন্য ১৪ জন হোম কোয়ারিন্টেনে আছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগের জ্বরে আক্রান্ত রোগী আরিফুল ইসলাম জানান, দুই দিন ধরে জ্বরে ভুগছেন তিনি। ফার্মাসিস্টের পরামর্শে নাপা ট্যাবলেট খেয়েছেন। তবু তার জ্বর কমেনি। তাই বাধ্য হয়ে হাসপাতালে এসেছেন। এ ছাড়া তাদের এলাকার অনেকেই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
রবিবার (২৭ জুন) দুপুর আড়াইটার দিকে জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. আশফিয়া বলেন, গত কয়েকদিন ধরে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। জ্বর হলে অনেকেই নিজের ইচ্ছে মতো নাপা বা অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খান। এটা মোটেও ঠিক না। যদি জ্বর হয়, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসক দেখিয়ে তার পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ খেতে হবে। কেননা, এখন করোনা ভাইরাসও রয়েছে। সিজনাল জ্বর-সর্দি নাকি কারোনার জন্য জ্বর-সর্দি তা চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি ভালো বুঝবেন এবং সেই ভাবে পরামর্শ দেবেন। তাই নিজেরা ওষুধ না খেয়ে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো খেতে হবে। যে কোনো সমস্যায় চিকিৎসককে জানাতে হবে।
শেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. আনওয়ারুরর রউফ বলেন, জ্বর, সর্দি-কাশি ও গলাব্যথার প্রকোপ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সিজোনাল কারণে এসব রোগের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান তিনি। এ সমস্ত রোগীদের নমুনা পরীক্ষায় বেশিরভাগের কভিড-১৯ নেগেটিভ আসছে। কারও সন্দেহ হলে যে কেউ করোনার পরীক্ষা করতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ কে চিহ্নিত করতে রেপিটেনজিন কীটের মাধ্যমে দ্রæত পরীক্ষার জন্য জেলা ও প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।