ওমর ফারুক সুমন, হালুয়াঘাট (ময়মনসিংহ) থেকেঃ
বাবা বিয়া দিবার চাইনাই। জোর কইরা বাজার করাইছে। আম্মাও রাজী হইনাই, কাকারা কেউ রাজী হইনাই। আশ্রাফ আর আজহারুল মিইলা আমারে জোর কইরা বাল্যবিবাহ দিতে চেয়েছিলো। আমি নিজেও রাজী ছিলামনা, আমাদের কেউই রাজী ছিলোনা। কাজী জোর কইরা বিয়ে দিতে বলে। কাজী কই আমার বয়স ১৮ বছর কইরা দিবো। কথাগুলো বলেন থানা হেফাজতে রতি হালুয়াঘাট উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেনের কন্যা মোছাঃ হাসনা খাতুন। সে খলিশাকুড়ি দাখিল মাদ্রাসার ৭ম শ্রেণী পড়ুয়া ছাত্রী। ১৪ জুলাই শুক্রবার দিবাগত রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান তার গ্রাম পুলিশ নিয়ে বাল্য বিবাহ পড়ানোর প্রস্তুতিকালে একটি নিকাহ রেজিষ্টার বইসহ আজহারুল নামে একজন ভুয়া কাজীকে আটক করে থানায় সোপর্দ করেন। আজহারুল হালুয়াঘাট উপজেলার গামারিতলা গ্রামের আলকাছ আলীর পূত্র।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান কামরুল হাসান জানান- গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে আমি আমার গ্রাম পুলিশ নিয়ে মেয়ের বাড়িতে যাই। সেখানে সে বিয়ে পড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। আমি নিকাহ রেজিষ্টার বই সহ এই ভুয়া কাজীকে আটক করতে পারলেও মেয়ের পিতা ও বর পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। তিনি বলেন- এই ভুয়া কাজী ইতিমধ্যে স্কুল পড়ুয়া অনেকগুলো মেয়ের বাল্যবিবাহ সম্পূর্ণ করেছে। আমি কয়েকবার লিখিত নোটিশ দিয়েছি তাকে। সে শুনেনাই। রাতের আধারে অত্র ইউনিয়নের মুল কাজী শফিকুল ইসলামের যোগসাজসে ১০-১৫ হাজার টাকার কন্টাক্ট’র মাধ্যমে এ রকম বাল্যবিবাহ সম্পন্ন করে থাকে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে সে ২০ টি মেয়ের বাল্যবিবাহ সম্পন্ন করেছে। অভিযোগ রয়েছে জুগলী ইউনিয়নের কাজী শফিকুল ইসলাম প্রত্যেক গ্রামে সে তার প্রতিনিধি নিয়োগ করে নকল ভুয়া নিকাহ রেজিস্টার বই ব্যাবহার করে রাতের আধারে বাল্যবিবাহ সম্পন্ন করে থাকেন। প্রকাশ ঘটলে তখন তিনি সম্পুর্ণ অস্বীকার করে বসেন।
অপরদিকে আটককৃত এই নিকাহ রেজিষ্টার বই তল্লাশি করে দেখা যায়, ইতিমধ্যে বেশ কিছু বাল্যবিবাহ সম্পর্ণ করা হয়েছে যাদের কোনটাতেই দিন তারিখ উলেখ নেই। এ ঘটনায় হালুয়াঘাট থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ লালমিয়া বলেন- ভুয়া কাজী থানা হেফাজতে আটক রয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।