বোরো ধান কাটার মৌসুম। মিজানুর কে পাওয়া গেল ধান খেতে। দিনমজুর হিসেবে অন্যের জমিতে ধান কাটছেন সে। কথা বলা জানা গেলো, ধানকেটে প্রতি দিন ৩০০ টাকা পায় সে। লিকলিকে হালকা গড়নের শীরের কারণে ধানের আটি (বোঝা) বইতে পারেন না বলে তাকে অন্যান্য দিনমজুরদের চেয়ে কম পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।
কিন্তু এই অদম্য মেধাবী মিজানুরের গল্পটা হওয়ার কথা ছিল অন্য রকম। সাধরণত পরিবারের কেউ পরিক্ষায় জিপিএ-৫ পেলে যেমনটি হয়। হয়তো এই সময় গুলোতে মিজানুরের কলেজে ভর্তির জন্য তোরজোর করার কথা ছিল। কিংবা মিজানুরের বাবা মা আনন্দে আত্মহারা হয়ে প্রতিবেশীদের মিষ্টি মুখ করানো কথা ছিল। কিন্তু কোনটাই হয়নি এবছর এসএসসি পরীক্ষায় পোড়াগাঁও আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া মিজানুর রহমানের জীবনে। সে শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের ধুপাকুড়া গ্রামের মো. হযরত আলীর ছেলে।
মিজানুর জানায়, তার বাবা মো. হযরত আলী পেশায় একজন রিকশা চালক। মা মরিয়ম বেগম গৃহিনী। তিন ভাই-বোন নিয়ে তাদের সংসার। ২৫ শতক জমির উপর একটি মাটির ঘর। এছাড়া কোন চাষের জমি নেই। মিজানুর রহমান সবার বড়। তাই অভাব অনটনের সংসারে বড় সন্তান হিসেব পড়ালেখার পাশাপাশি দিনমুজুরী কাজ করে সংসারে সহায়তা করতে হয় তাকে।
মিজানুরের মা মরিয়ম বেগম বলেন, ‘‘মিজানুরের বাপ রিকশা চালাইয়া যে টেহা পায় তা দিয়া সংসার চলে না। মিজান সারা বছর সংসারে সাহায্যের লাইগা দিনমুজুরীর কাম করে। পুলাডা লেখাপরা করার বিরাট ইচ্ছা। কিন্ত আমরা গরিব মানুষ ছেলেরে কেমনে লেহাপড়া করামু?’’
পোড়াগাঁও আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক মো. আবুল হোসেন বলেন, মিজানুর রহমান লেখাপড়ার পাশাপাশি দিনমুজুরীর কাজ করে। ছেলেটা মেধাবী। তাকে ইংরেজির বিষয়টি পড়িয়েছি। মেধাবী ও দরিদ্র হওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষসহ সকলেই তাকে সহায়তা করেছেন। ছেলেটা সহযোগিতা পেলে লেখাপড়ায় সে ভবিষ্যতে অনেক ভালো করবে।