জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। যমুনা নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি কমলেও বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। এ জেলার দুই উপজেলার প্রায় ৪৩ হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দি হয়ে রয়েছেন।
জেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এখনও প্লাবিত রয়েছে। তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১১ হাজার ১০০ হেক্টর জমির রোপা আমন পানিতে ডুবে রয়েছে। যমুনার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইসলামপুর উপজেলার ২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি প্রবেশ করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যমুনার নদীর পানি কিছুটা কমলেও তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এখনও প্লাবিত রয়েছে। রোপা আমন ধানের ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত রয়ে গেছে। নদী তীরবর্তী মানুষের ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। এসব এলাকার অনেক রাস্তা-ঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়াও ইসলামপুর উপজেলার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে।
পানি কমলেও বানভাসী মানুষের ঘর থেকে এখনও পানি নামেনি। রাস্তা-ঘাট এখনো তলিয়ে রয়েছে। নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার দেওয়ানগঞ্জ, বকশিগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ি উপজেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
জেলা প্রশাসনের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে ৯ হাজার ৮৩০টি পরিবারের প্রায় ৪৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুর উপজেলায় দুইটি আশ্রয়ন কেন্দ্রে ১৪১টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়া ইসলামপুর উপজেলার দুইটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা ও ২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। ইসলামপুর উপজেলার চিনাডুলী উচ্চ বিদ্যালয়, সাপধরী উচ্চ বিদ্যালয় ও সাপধরী মাদ্রাসাসহ ওই উপজেলার ২৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
অপরদিকে এ জেলায় ১১ হাজার ১০০ হেক্টর রোপা আমনের ক্ষেত বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ১০ হাজার ৪০ হেক্টর রোপা আমন সম্পূর্ণরূপে ও ১ হাজার ৬১ হেক্টর রোপা আমন আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে।
ইসলামপুর উপজেলার পাথর্সী এলাকার আব্দুল মমিন বলেন, ‘পানি একটু কমেছে, কিন্তু ঘরবাড়ি থেকে তো পানি নামেনি। রাস্তাঘাট এখনও তলিয়ে আছে। চলাফেরা করা খুবই সমস্যা। ফসল নষ্ট হয়ে গেলে না খেয়ে মরতে হবে। গরু-ছাগলের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। গরু-ছাগল নিয়ে খুব বিপদে পড়েছি।
ওই উপজেলার চিনাডুলী এলাকার হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাড়ি-ঘর থেকে পানি নামেনি। ধান ও শাক-সবজি ক্ষেত্রেও পানি। পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মো. ইমরান আহমেদ বলেন, ‘এ জেলার ৭টি উপজেলার মধ্যে ২টি উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। বানভাসীদের মাঝে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও গবাদিপশু, শিশু খাদ্য ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এ সময় গবাদিপশুর চিকিৎসা ও ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য খামারিদের পুর্নবাসনে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। জেলা প্রশাসন সবসময় বানভাসীদের পাশে থাকবে। বন্যা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে।’