বাউল মতিউরের বয়স তখন ১২ বছর। রেডিওতে গান শুনতেন সব সময়। এর মধ্যেই একদিন পালা গানের আসরে তার দেখা হয়ে চাঁন বয়াতির সঙ্গে। এরপরে থেকেই বিভিন্ন গানের আসরে যেতেন মতিউর। হয়ে যান চাঁন বয়াতির শিষ্য, হাত তুলেন একতারা শুরু করেন গান গাওয়া। সেই থেকেই শুরু। কিশোর মতিউর হয়ে ওঠেন বাউল মতিউর। তিনি বাউল গান ও পালা গান বেশি করেন। বাউল মতিউর গান গেয়ে উপার্জিত টাকায় ৩ সন্তানকে বড় করেছেন। তার ২ মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। আর ছেলে পড়াশোনা করছে নবম শ্রেণিতে। বাউল এখন তার ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন। ছেলে বড় হয়ে তার সংসারের যেন হাল ধরেন এ স্বপ্ন দেখেন বাউল। কিন্তু স্বপ্ন পূর্ণ হবে কি না বাউলের জানা নেই।
পরনে সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা, মাথায় হলুদ পাগড়ি পরা ৬৩ বছর বয়সের একজন একতারা বাজিয়ে গলা ছেড়ে গান করছেন। ‘কেন যে মওলা আমায় বাউলা বানাইল’- এ গানের সঙ্গে সঙ্গে দুলছে তার শরীর ও একতারা। তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে আরও অনেকেই। সবাই মুগ্ধ হয়ে শুনছে বৃদ্ধের পরিবেশনা। গান শেষ হতেই সবাই করতালি দিয়ে অভিবাদন জানায়।
শিল্পী মতিউর বাউলের জীবনে এমন ঘটনা প্রতিদিন ঘটে। গান শুনিয়ে যে বকশিশ পান তা দিয়েই তার সংসার চলে। জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার রায়ের বাকাই গ্রামে জন্ম মতিউর রহমান মতি বাউলের। ঘুরে বেড়ান জেলা জুড়ে। বাউল গান আর পালা গান পরিবেশন করেন তিনি। এটিই তার পেশা ও নেশা।
বাউল মতিউরের সঙ্গে উপজেলার মানিক বাজারে একটি গানের আসরে দেখা হলে তিনি তার এ জীবদ্দশার কথাগুলো জানান। এসময় বাউল মতি বলেন, কিশোর বয়স থেকেই গান শুরু করেছিলাম। এখনও গান গেয়ে যাচ্ছি। সংসার আর জীবনে গান ছাড়া আর নেই কিছুই। যেভাবে চলছে এভাবেই হইতো চলবে। লোকজন এখন আর গান শুনে তেমন পয়সা দেয় না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি প্রতি মাসে একটা অর্থের ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে একটু ভালো থাকতাম।
রায়ের বাকাই এলাকায় ব্যবসায়ী মন্টু মিয়া বলেন, বাউল মতিউর রহমান সম্পর্কে আমার চাচা হয়। আমরা ছোটবেলা থেকেই দেখতেছি মতি চাচা গান গেয়ে ঘুরে বেড়ায়। সকালবেলা একটি ব্যাগ ও হাতে একতারা নিয়ে অজানা উদ্দেশ্যে বের হয়। সারাদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে গান করেন। বকশিসের যে টাকা পান সেটা দিয়েই তার সংসার চালাতে হয়। লোকজন এখন আর গান শুনে টাকা পয়সা দেয় না কষ্টের মধ্যেই রয়েছে বাউল মতিউর।
বাউলের স্ত্রী রাবেয়া বেগম বলেন, গান গেয়ে যে টাকা বকশিশ পান তা দিয়েই সংসার চলাতে হয়। এছাড়া তো সংসারে আয় রোজগার করার মতো কিছু নেই। ছোট ছেলেকে পড়াশোনা করাচ্ছি তাকে নিয়ে এখন আমাদের স্বপ্ন। ছেলেটাকে মানুষের মতো মানুষ করতে পারলে সে যেন আমাদের একটুখানি দেখে এটাই আশা।
বাউল মতিউর রহমানের কথা জানানো হলে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেলিম মিঞা খোঁজখবর নিয়ে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।