কর্মজীবী মানুষের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী। কিন্তু সে অনুযায়ী দেশে নারীদের জন্য গণপরিবহনে তেমন সুবিধা তো নেই, বরং হতে হয় হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার। গণপরিবহনে যাতায়াত করাটা নারীদের জন্য যে আর নিরাপদ নয়, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংগঠনের পরিসংখ্যানেও বিষয়টি স্পষ্ট। সর্বশেষ যাত্রীকল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে গত বছরই ৫২টি ঘটনায় গণপরিবহনে ৫৯ নারী ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শুধু পরিবহন শ্রমিক, চালক, হেলপারই নয়। কখনো কখনো পুরুষ সহযাত্রীর মাধ্যমেও তারা যৌন সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।
সড়কপথে ৪৪, রেলপথে ৪ ও নৌপথে নারী নির্যাতনের ৪টি ঘটনা ঘটে গত বছর। এর মধ্যে ১৬টি ধর্ষণ ও ১২টি গণধর্ষণ ছাড়াও ধর্ষণের চেষ্টা ৯টি এবং ১৫টি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। ৪৪টি ঘটনায় মামলা হয়েছে এবং ৯৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নারীরা অবর্ণনীয় কষ্ট ও অসহনীয় হয়রানি সহ্য করে যাতায়াত করছেন। অনেকেই না পেরে চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন।
নারী নির্যাতন বন্ধে প্রতিবেদনটিতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো; যৌন সহিংসতার মামলা, গ্রেপ্তার ও বিচার দ্রুত শেষ করা; সিসি ক্যামেরা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা; চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারের নেমপ্লেটসহ পোশাক বাধ্যতামূলক করা এবং তাদের নিয়োগপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র ও ছবি নিয়ে ডেটাবেজ তৈরি করা ইত্যাদি। আমরা মনে করি, সুপারিশগুলো আমলে নেওয়া জরুরি।
সারাবিশ্বেই যখন নারীর ক্ষমতায়নের পরিসর বৃদ্ধি ও লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণের মতো বিষয়গুলোকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে, তখন আমাদের দেশে নারীদের সার্বিক চিত্র খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়। নারীর প্রতি সহিংসতা এবং যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ ও এর বাস্তবায়ন প্রয়োজন। তবে এ ব্যাপারে সরকারের তরফে করণীয় ঠিক করা জরুরি। গণপরিবহনে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। আমাদের দেশের নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ ও তাদের অধিকার সুরক্ষা এখন সময়ের দাবি। কারণ দেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পেছনে ফেলে আর যাই হোক উন্নয়ন সম্ভব নয়।