বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে আইনি পরামর্শ নেওয়ার জন্য তারা প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল হোসেনের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি খালেদার মামলা লড়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন তা সঠিক নয়। আজ বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির মহাসচিব এ কথা বলেন। এ সময় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশে একটি মিথ্যা মামলা সাজিয়ে সাজা দেওয়া হয়েছে। সেই ব্যাপারে আইনি পরামর্শ নেওয়ার জন্য আমরা গতকাল (মঙ্গলবার) দেশের প্রতিথযশা আইনজীবী সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন সাহেবের কাছে গিয়েছিলাম। রায়ের ৬‘শ পৃষ্ঠার ভলিউম দিয়েছি। আমরা দীর্ঘ আলোচনা করেছি। তিনি বলেছেন- আমি এটা পড়ে স্টাডি করে আমার মন্তব্য জানাব এবং পরামর্শ দেবো।’ বিষয়টি নিয়ে কিছু গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা যেটা আপনাদের কাছে অনুরোধ থাকবে, এই ধরণের বিষয় যখন থাকবে বিশেষ করে ড. কামাল হোসেনের মতো ব্যক্তি বা আমার পার্টির বিষয়টা থাকবে তখন দয়া করে আমাদের সাথে কথা বলে নেন তাহলে এই ধরণের ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয় না। একটি পত্রিকায় বড় করে দিয়ে দিয়েছেন যে, ড. কামাল প্রত্যাখান করেছেন। এটা তো ঠিক না। সেজন্য বাধ্য হয়ে রাতে প্রেস রিলিজ দিতে হয়েছে এটা সত্য নয়।’ খালেদা জিয়ার জামিন বিলম্ব করতে সরকার নানা কৌশল নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, সরকারের যে মূল নকশা,সেই নকশাটা প্রকাশিত হচ্ছে। সেটা প্রমাণিত হচ্ছে যে তারা বেগম খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ করে রাখতে চায়,তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায় এবং তাকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখতে চায়। বিএনপির আইনজীবীদের ভুলের কারণে খালেদা জিয়ার জামিন বিলম্ব হচ্ছে- আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের আইনজীবীরা দেশের প্রতিথযশা আইনজীবী এবং তারা দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতার মধ্য দিয়ে মামলা পরিচালনা করছেন। সমস্যাটা সেই জায়গায় না। সমস্যাটা হচ্ছে পূর্বনির্ধারিত তারা ছক করে নিয়েছে। সেই ছক অনুযায়ী তারা মামলা করেছে।’ ‘এই মামলার বিচার কী হবে, রায় কী হবে সব কিছুই পূর্বনির্ধারিত। কারণ সেদিনই প্রধান বিচারপতিকে দেশ থেকে বের করে দেওয়া হলো এবং তাকে বাধ্য করা হলো পদত্যাগ করতে। পরের দিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি হলেন, তাকেও সুপারসিট করে অন্যজনকে প্রধান বিচারপতি করা হলো। সেইদিন থেকেই আমরা বুঝে গেছি যে, দেশে বিচার বিভাগ পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে গেলো’- বলেন ফখরুল। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকারের দমননীতির সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, এটা সরকারের একটা নীল নকশার অংশ। বিএনপিকে জনগণের কাছে থাকতে দিতে চায় না তারা। দমন-পীড়ন-জুলুম করে বিএনপিকে ভেঙে ফেলা যাবে না। নির্বাচন কমিশনের কাছে নালিশি চিঠির প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা যৌক্তিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে এই চিঠি দিয়েছি। যখন নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণা করা হয়নি, যখন প্রধান বিরোধী দলের নেত্রী কারাগারে এবং বিরোধী রাজণৈতিক কর্মীদের কোনো রকমের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হচ্ছে না। সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জায়গায় দেশ-বিদেশে সভা-সমাবেশ করছেন। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব এটাকে বন্ধ করা এবং সকলকে সমান সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়া। ’ জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের বক্তব্যে প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, ‘এই সংসদ এমন একটা বিরোধী দল তৈরি করেছে যে, বিরোধী দলের নেত্রী করুন আবেদন করছেন- আমাদেরকে বাঁচান। আমরা কি আসলে সরকারি দল নাকি বিরোধী দল- এটা সংসদনেত্রী আপনিই বলেন। আমরা আগেই বলে এসছি যেটাকে পরিচয় বিহীন বলা যায়।’