“কে লইবে মোর কার্য্য, কহে সন্ধ্যারবি, শুনিয়া জগৎ রহে নিরুত্তর ছবি। মাটির প্রদীপ ছিল, সে কহিল, স্বামী, আমার যেটুকু সাধ্য করিব তা আমি”- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতার সাথে সুর মিলিয়ে নকলা উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত তিনদিন ব্যাপী বইমেলা সম্পর্কে ইউএনও রাজীব কুমার সরকার বলেছেন, “নকলা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ্য থেকে এই বই মেলার আয়োজন করে আমরা ঠিক এই কাজটি করেছি। এই উপজেলার একটি পরিবারও যদি আলোকিত হয়, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও যদি আলোকিত হয়, এমনকি হাজার হাজার শিক্ষার্থী যে উপজেলায়, এরমধ্যে মাত্র ১০ টি হৃদয়েও যদি চেতনার অনির্বাণ শিখা আমরা জ্বালাতে পারি, আমি বলবো, আমার যেটুকু সাধ্য করেছি তা আমি। ” তিনি আজ বিকেলে শেরপুরের নকলায় উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত তিন দিন ব্যপী বইমেলা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মেলায় ১২ টি স্টল পাঠকের চাহিদা পূরণে সক্ষম কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “যে উপজেলা কখনো বইমেলা দেখেনি, যে উপজেলার শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, যারা কখনো এই স্থানীয় গাইড বই, নোট বইয়ের বাইরে লাইব্রেরী নামক অস্তিত্বের সাথে পরিচিত ছিল না, তাদের জন্য ঠিক উপযুক্ত মনে করছি। আমি বিশ্বাস করি, আগামীতে আমি থাকি বা না থাকি আরো বড় পরিসরে এই মেলা হবে। তিনি আরো বলেন, জীবন কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যপুস্তক ও সিলেবাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও জীবনের আরো বহু দিক রয়েছে। শ্রেষ্ঠ মানুষের বই পড়লে, সেই মহামানুষের আত্মাকে ধারন করা সম্ভব হয়।”
‘পড়িলে বই আলোকিত হই, না পড়িলে বই অন্ধকারে রই’-শ্লোগানে আজ রবিবার বিকেলে শেরপুরের নকলায় প্রথমবারের মতো তিন দিনব্যাপী বই মেলা শুরু হয়েছে। স্বাধীনতা পুরষ্কারপ্রাপ্ত লেখক অধ্যাপক যতীন সরকার নকলা উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ বই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে ইউএনও রাজীব কুমার সরকার লিখিত রম্যরচনা ‘কবি সব করে রব’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয় এবং আয়োজকদের পক্ষ থেকে অধ্যাপক যতীন সরকারকে সম্মাণনা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। পরে উদীচী শেরপুর জেলা সংসদ ‘মরা’ নাটক মঞ্চস্থ করে।
এই মেলায় ১২টি বইয়ের স্টল স্থাপন করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণে প্রতিদিন আলোচনা, ক্যুইজ প্রতিযোগিতা, কবিতা পাঠ, নৃত্য-সংগীত, নাটক আয়োজনের মাধ্যমে এই উদ্যোগকে বর্ণিল করা হয়েছে। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে বইমেলার পর্দা নামবে। উদ্বোধনের পর থেকেই মেলায় স্টলগুলোতে বইপ্রেমী বিভিন্ন শ্রেনী-পেশার নানা বয়সী মানুষের ভীড় দেখা যায়।