দেড় হাজার কিডনি প্রতিস্থাপনের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম; যেগুলোর সবই তিনি করেছেন বিনামূল্যে।
স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত এই চিকিৎসক এর মাধ্যমে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি কিডনি প্রতিস্থাপনের ইতিহাস গড়েছেন বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তিনি প্রথম কিডনি স্থাপন করেছিলেন ২০০৭ সালে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটায় মাদারীপুরের এক যুবকের অপারেশন শুরু করেন তিনি, যা শেষ হয় রাত সাড়ে ১২টায়।
সাড়ে চার ঘণ্টা অপারেশনের পর ডা. কামরুল জানান, মাদারীপুরের মো. শহীদুল ইসলাম নামে এ যুবকের দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তার বাবা ওই যুবককে একটি কিডনি দিয়েছেন। তার বাবা তারা মিয়ার বয়স ৫৫ বছর। তার ডান পাশের কিডনিটা নেওয়া হয়েছে প্রতিস্থাপনের জন্য।
তিনি বলেন, “শহীদুলের কিডনির যে সমস্যা হয়েছে সেটা ইয়াং বয়সে হয়। কিডনি আস্তে আস্তে বিকল হয়ে যায় কিন্তু বোঝা যায় না। টেরই পাওয়া যায় না, প্রোটিন যেতে যেতে যখন শেষ পর্যায়ে আসে তখন ধরা পড়ে যে কিডনির সমস্যা। তখন আর কিছু করার থাকে না।”
বিনা পয়সায় দেশে কিডনি প্রতিস্থাপনের ইতিহাস তৈরি করা এই চিকিৎসক ঢাকার শ্যামলীতে তার প্রতিষ্ঠিত সিকেডি অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে থাকেন। প্রতি সপ্তাহে পাঁচটি কিডনি প্রতিস্থাপন করেন তিনি।
এখন পর্যন্ত কিডনি প্রতিস্থাপন তিনি কোনো পারিশ্রমিক নেননি। তবে অস্ত্রোপচারের ওষুধসহ অন্যান্য খরচ রোগীকে বহন করতে হয়। সব মিলিয়ে খরচ হয় দুই লাখ টাকা। প্রয়োজনীয় প্রতিস্থাপন পরবর্তী ফলোআপ ও পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেও রোগীর কাছ থেকে কোনো ফি নেন না এই অধ্যাপক।
এক সময় ঢাকার জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন ডা. কামরুল।
মানবিক কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ২০২২ সালে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা পদক পান তিনি।
কিডনি প্রতিস্থাপনের সফলতার হার কেমন জানতে চাইল ডা. কামরুল বলেন, প্রতিস্থাপনের পর ১ বছর কিডনি সচল থাকার হার ৯৪ শতাংশ। ৩ বছর পর্যন্ত ৮৪ শতাংশ, ৫ বছর পর্যন্ত ৭২ শতাংশ এবং ১০ বছর পর্যন্ত কিডনি সচল বা সুস্থ থাকার হার ৫০ শতাংশ।
“আমি দেখেছি এক বছর পর্যন্ত ৯৫ শতাংশের মতো কিডনি সচল থাকে। একটা সমস্যা হয় আমি তিন মাস পর রোগীকে ছুটি দিলে বাড়ি চলে যায়। রোগীরা অনেক ওষুধ খায় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। ফলে অসতর্কতার কারণে ঠাণ্ডা লাগলে নিউমোনিয়া হয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমন নিউমোনিয়া হয় যে আর ভালো করা যায় না। দেখা যায় কিডনি ভালো থাকে কিন্তু রোগী মারা যায়।”
তিনি বলেন, কিডনি প্রতিস্থাপনের পর যদি রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সতর্ক থাকে, জীবনযাপন করে তাহলে সুস্থ্য থাকার সম্ভাবনা ভালো থাকে। তবে তরুণদের কিডনি দানের হার বেশি হলে গ্রহীতারা আরও দীর্ঘ সময় সুস্থ থাকতে পারতো।