শেরপুরে ঐতিহাসিক সূর্যদী গণহত্যা দিবস উপলক্ষে শহীদদের স্মরণে স্মরণসভা ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ২৪ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের সূর্যদী এ আহম্মেদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সূর্যদী যুদ্ধ ও গণহত্যা দিবস উদযাপন পরিষদ আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উপসচিব পদে সদ্য পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুকতাদিরুল আহমেদ।
সূর্যদী যুদ্ধ ও গণহত্যা দিবস উদযাপন পরিষদের সভাপতি এম এ হাসেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সাইদুর রহমান, সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঈফফাত জাহান তৃলি, সদর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার এ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান আকন্দ, প্রেসক্লাব সভাপতি রফিকুল ইসলাম আধার ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন।
সমাজসেবক এমরান আলী মাস্টারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল মতিন প্রমুখ।
আলোচনা শেষে শহীদ পরিবারের সদস্যদের মাঝে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রত্যেককে উপহার সামগ্রী তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২৪ নভেম্বর শেরপুর সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের সূর্যদী গ্রামে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া বৃহত্তর ময়মনসিংহের আলবদর প্রধান কামারুজ্জামানের নির্দেশে স্থানীয় রাজাকারদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে জিপ আর ট্রাক বোঝাই পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী হামলা করে। লোকজন কিছু বুঝে ওঠার আগেই হানাদার বাহিনী ছুড়তে থাকে এলোপাতাড়ি গুলি। এক সময় রক্তের নেশায় উন্মুখ হিংস্র হায়েনাদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করতে নিজেদের নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও ওই দিন আত্মগোপনে থাকা ওই গ্রামেরই বাসিন্দা মাত্র ৬ বীর মুক্তিযোদ্ধা ‘গিয়াস কোম্পানি’র মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব আলী, আবদুল খালেক, ফজলুর রহমান, হাবীবুর রহমান, মমতাজ উদ্দিন ও আবুল হোসেন সামনে এগিয়ে যান। যাকে যেখানে পেয়েছে সেখানেই পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছে পাক সেনারা।
এদিকে স্কুল মাঠে লাইনে দাঁড় করানো নিরীহ গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করার নির্দেশ দেয় পকিস্তানি এক সেনা কর্মকর্তা। ঠিক ওই সময়ে গ্রামের একটি ধানক্ষেতে লুকিয়ে থাকা মুক্তিযোদ্ধা আফসার উদ্দিন দূর থেকেই ফাঁকা গুলি করতে থাকেন। ওই সময় পাকবাহিনীরা লাইনে দাঁড় করানো লোকদের ফেলে রেখে ছুটে যায় ওই মুক্তিযোদ্ধার সন্ধানে। পরে পার্শ্ববর্তী খুনুয়া চরপাড়া গ্রামের ওই মুক্তিযোদ্ধা আফসার উদ্দিনকে সূর্যদী গ্রামের একটি ধানক্ষেতে নির্মমভাবে হত্যা করে। সেই সাথে শহীদ হয় গ্রামের মোট ৪৯ জন নিরীহ গ্রামবাসী। এজন্য ২৪ নভেম্বর শেরপুরবাসীর কাছে এক ঐতিহাসিক স্মরণীয় দিন।