“আমি অনেক অপকর্ম করেছি, অনেক মানুষের ক্ষতি করেছি; আপনারা আমায় মাফ করে দেন” গতকাল মঙ্গলবার কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মিষ্টার নামে এক দূর্ধর্ষ ডাকাত। হ্যাঁ সত্তি বলছি; ডাকাত! কিন্তু সে এখন আর ডাকাত নয়। সবার মনেই প্রশ্ন থাকতে পারে ডাকাত কিভাবে এখন ডাকাতি ছাড়ে? কিন্তু অবিশ্বাস হলেও সত্য।
গত দেড় বৎসর যাবত ঢাকায় পাড়ি জমান ডাকাত নামে পরিচিত মিষ্টার। সেখানে জীবনযুদ্ধে লড়াকু লড়াই করেন তিনি। হাতে নেন রিক্সা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রিক্সা চালিয়ে জীবন যখন ঘুরানোর চেষ্টা করেন ঠিক তখনই তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। বাসের সাথে এক্সিডেন্টে তার বাম পা ভেঙ্গে যায়।
পরে সেখানে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে আবারো অক্সিডেন্ট। পাপ যে বাপকেও ছাড়ে না এটাই তার প্রমাণ। শেরপুরের শ্রীবরদী লংগরপাড়া পোড়াঘর এলাকার বাসিন্দা মিষ্টার। তিনি মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। স¤প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ডাকাত নামে পরিচিত মিষ্টারকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাসও দিয়েছেন শ্রীবরদী লোকাল বয়েজের প্রতিষ্ঠাতা-পরিচালক এজেড রুমান।
তিনি স্ট্যাটাসের প্রথম অংশে লিখেছেন “শ্রীবরদীর একজন দূর্ধর্ষ ডাকাতের জীবনের পরিণতি”। পরে লিখা আছে- আসলে মানবতার লক্ষ্য শুধুই ভালোদের জন্য নীহিত হবে এমনতো কোন কথা নেই। খারাপ যদি ভালো হওয়ার আর্তনাদ প্রকাশ করে, খারাপ জীবনের কেও যদি ভুল বুঝে ভালো হতে সহযোগীতা চায় তবে ভালোর জন্য পথচলা মানুষগুলো কি সিদ্ধান্ত নিবে, প্রশ্নটা আপনাদের দিকেই রাখলাম? নিশ্চয় শুধু ভালো কে আরো ভালো করে সমাজের পরিবর্তন সম্ভব নয়, সমাজের পরিবর্তনটা নিশ্চিত করতে হলে সম্ভবত খারাপ কে ভালো করার প্রচেষ্টাটাই চালাতে হয় সবার আগে।
তবে হ্যাঁ আপনি আমি চেষ্টা চালাতেই পারি কিন্তু খারাপ যদি আপনার আমার চেষ্টার সুযোগ নিয়ে ভালোকে না ছুয়ে আবারো খারাপেই নিমজ্জিত হয় সেটা তার জীবনের ব্যর্থতা। কিন্তু ভালো যদি খারাপকে ভালোর পথ দেখাতে চেষ্টা না করে তবে সেটা ভালোর ব্যর্থতা কিনা এমন প্রশ্ন রাখারও সুযোগ থেকে যায়। যাইহোক স্রষ্টা প্রতিটি মানুষকে ভালোর জন্যই পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন এটাই ধ্র“ব সত্য। যে খারাপ তাকে ভাল হতে হবে, যে ভালো তাকে খারাপকে ভাল করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। মিষ্টার মানুষটি খুব খারাপ, যা আপনারা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন।
এখন একজন অতি খারাপ মানুষকে ভালো করার চেষ্টা চালানোর সুযোগ নেওয়াকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন সেটা আপনার উপর ছেড়েদিলাম। সাধারণ মানুষ মিষ্টারের নাম শুনলে হয়তো গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যাবে। এই মিষ্টার এক সময় শ্রীবরদী-লঙ্গরপাড়া রোড, শ্রীবরদীর আশেপাশে যে ডাকাতি ছিনতাইগুলো হতো এর মূল হোতা ছিলেন এই মিষ্টার। একজন দূর্ধর্ষ ডাকাত, ছিনতাইকারী হিসাবেই তার পরিচিতি। কিন্তু তার ভাষ্যমতে দেড় বছর আগে সে এসব অপকর্ম ছেড়ে দিয়েছেন। দেড় বছর ধরে শ্রীবরদী-লঙ্গরপাড়া রোডে ডাকাতি ছিনতাই হয়না এই তথ্যটাও সঠিক।
সেই দূর্ষর্ধ মিষ্টারের বর্তমান অবস্থা খুব খারাপ। খুব বিভৎস। ঢাকায় এক রোড এক্সিডেন্টে বাম পায়ের অবস্থা খুব ভয়াবহ হয়েছিলো। মোটামুটি চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলো সে। কিন্তু সে পা নিয়েই আবারো এক্সিডেন্টের কবলে পরে সে। একেই বলে পাপের প্রতিফল! জীবনে অনেক পাপ করেছে সে। অনেক মানুষের ক্ষতি করেছে।
আজ চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে সেই কথাই বারবার বলে যাচ্ছে আমি অনেক অপকর্ম করেছি, অনেক মানুষের ক্ষতি করেছি, আপনারা আমারে মাফ কইরা দেন, আমারে একটু বাইচা থাকার সুযোগ দেন, আমি ভালো হইতে চাই! হাতের তালুতো কালো বয়রা হওয়ার দাগ দেখিয়ে বলছে দেড় বছর ধরে রিক্সা চালাইয়া খাইতাছি ভাই, আমি খারাপি বাদ দিছি আমারে একটু বাঁচাইন, আমার পাও ডা ভালা করি দেন। পায়ের অবস্থাটা সত্যিই বিভৎস হয়ে গেছে।
আমি নিজেও ক্ষুব্ধ ছিলাম তাই এমন নাজুক অবস্থা নিয়ে পঙ্গু মিষ্টারকে সামনে পেয়েও নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারিনি। বয়সে অনেক সিনিয়র সে, তবু তুই তুমি করে অনেক কথা বলে বললাম। বললাম, আজ দেখো পাপের শাস্তি কিভাবে হয়। অনেক রথি মহারথীর হয়ে অনেক অপকর্মওতো তুমি করে দিয়েছো। আজ তারা কোথায়?
শুধু মাথা নীচু রেখে মিষ্টার বলে গেলো। কেও পাশে নাই ভাই, যখন সবল ছিলাম তখন সবাই ছিলো, ইনি তিনি অনেক আদর করতেন। আজ এই অসহায় আমার পাশে কেও নাই; ভাইগো আমি অনেক খারাপ আছিলাম, আমারে ভালা হওয়ার একটা সুযোগ দেন, স্বার্থপররা স্বার্থ হাসিলের জন্য আমারে শুধু ব্যবহারই করছে, এখন কেও দেখতাছেনা। হায়রে দুনিয়া! আমি ভালো মানুষগুলার সাহায্য চাই। সবাই মিইলা আমার পাঁ টারে ভালো কইরা দেন।
আমি বাঁচতে চাই। আমি ভালো হয়ে যাইতে চাই। অনেক জেদ ক্ষোভের জন্ম হয়েছিলো। কিন্তু মিষ্টারের বারবার বলে যাওয়া। আমি বাঁচতে চাই, আপনারা আমারে বাঁচান ভাই, আমি ভালো হইতে চাই। কথাগুলো বারবার বেজে যাচ্ছিলো কানে। এক্ষেত্রে একজন মানুষ হিসাবে কি দায়বদ্ধতা এড়ানোর সুযোগ আছে আপনার আমার? প্রশ্নের উত্তর খুজতে আপনাদের সকলের সহযোগীতা চাচ্ছি।
চিকিৎসাহীনভাবে মিষ্টার পরে রয়েছে বেশ কিছুদিন যাবৎ। নিজ উদ্যোগে নীরবেই মিষ্টারকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এখানে মিষ্টারের চিকিৎসা সম্ভব নয়। উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। প্রয়োজন অনেক অর্থের। এবার দেখুন এগিয়ে আসা যায় কিনা। একজন খারাপ ব্যক্তিকে ভালো করার প্রচেষ্টায় এগিয়ে আসতে যোগাযোগ করুন- ০১৭১৬-৯০৯০৩৭।