সবাইকে কাঁদিয়ে চিরঘুমের দেশে পাড়ি দিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক। শনিবার বিকাল ৫টার দিকে ছয় বছর বয়সে মারা যাওয়া ছেলে মোহাম্মদ শারাফুল হকের কবরে দাফন করা হয় তাকে। সদ্যপ্রয়াত মেয়রের মা ফাতেমা জোহুরা বেগমের কবরও পাশেই। আনিসুল হকের দাফনের সময় পাশে ছিলেন তার স্ত্রী রুবানা হক, ছেলে নাভিদুল হক, দুই মেয়ে ওয়ামিক উমায়রা হক ও তানিশা ফারিয়াম্যান হক, নাতনি, ছোট ভাই সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকসহ অন্য স্বজনেরা। ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ বিশিষ্টজনেরাও। দাফন শেষে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে তার মরদেহ বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে শেষবারের মত দেখতে নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আর্মি স্টেডিয়ামে সমবেত হন। সেখানে বিকেল ৪টা ১৯ মিনিটে বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে মরহুমের জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজায় সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। মন্ত্রী, এমপিসহ রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ এতে অংশ নেন। তার আগে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মেয়রের মরদেহ বহনকারী বিমানটি সিলেটে এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। এরপর দুপুর ১টার দিকে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায় ফ্লাইটটি। বিমানবন্দরে পরিবারের পক্ষ থেকে আনিসুল হকের মরদেহ গ্রহণ করেন মেয়রের ছোটভাই সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মো. শফিউল হক। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ বিশিষ্টজনেরা। বেলা দেড়টার দিকে আনিসুল হকের মরদেহ বহনকারী গাড়ি বনানীর ২৩ নম্বর সড়কের বাসায় পৌঁছে। এ সময় স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সৃষ্টি হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। এর কিছুক্ষণ পর বাসায় আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তিনি প্রায় ৩০ মিনিট অবস্থান করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আনিসুল হকের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানান। তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মরহুমের ছোট ভাই সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হকসহ মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। গত ২৯ জুলাই সপরিবারে যুক্তরাজ্য সফরে যান আনিসুল হক। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৩ আগস্ট তাকে লন্ডনের ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার মস্তিষ্কে প্রদাহজনিত রোগ ‘সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস’ শনাক্ত করেন চিকিৎসকরা। এরপর তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি ঘটলে তাকে গত ৩১ অক্টোবর আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। গত সোমবার তার রক্তে সংক্রমণ ধরা পড়লে তাকে পুনরায় আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। শেষে গত বৃহস্পতিবার তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তিনি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সংগঠন এফবিসিসিআই এবং বিজিএমইএ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আনিসুল হক ১৯৫২ সালে ২৭ অক্টোবর নোয়াখালীর কবিরহাটে জন্মগ্রহণ করেন।