শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌরশহরে রাতের আধারে সন্ত্রাসী কায়দায় এক বিধবা নারীর প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যের জমি জবরদখলের পায়তারা চালিয়েছে মুন্সীগঞ্জ জেলার বাসিন্দা আবু সাইদ নামে এক ব্যক্তি। পৌরশহরের আড়াইআনী মহল্লার পুরাতন ওয়ার্ল্ডভিশন রোডের বাসিন্দা মৃত ইদ্রিস মাস্টারের বিধবা স্ত্রী রুবিনা ইদ্রিস (৬০) এমন অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি জানান, এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হলেও পুনরায় ওই জমি জবরদখলের পায়তারা করছেন আবু সাইদ। অভিযোগ রয়েছে জমির দখলদার মালিকপক্ষ রুবিনাকে মিথ্যা মামলায় হয়রাণীসহ নানাভাবে হুমকী ধমকী দেওয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, ১৯৯৩ সালের ১১ মার্চ মাসে বাবুল দত্তের কাছ থেকে এওয়াজ বদল করে সাড়ে ৫৩ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে নেন শহরের আড়াইআনী বাজার মহল্লার পুরাতন ওয়ার্ল্ডভিশন রোডের বাসিন্দা ইদ্রিস আলী মাস্টার। সেই থেকে ইদ্রিস আলী মাস্টার এই জমির ভোগদখলে রয়েছেন। নালিতাবাড়ী মৌজায় অবস্থিত চৌহদ্দি উল্লেখিত জমিটির বর্তমান খতিয়ান নম্বর ১৩২৩ এবং দাগ নম্বর ২৪৭৭। এ জমির নিয়মিত ভূমিকর পরিশোধ করে নামজারীও করেছেন ইদ্রিস মাষ্টার।
এদিকে, ১৯৯১ সালে আরএস ও আরওআর রেকর্ডমূলে গোপাল চন্দ্রের কাছ থেকে রেজিস্ট্রি করে ৪১ শতক জমি কিনে নেন মুন্সীগঞ্জ জেলার নার্গিস আক্তার নামে এক নারী। বিআরএস রেকর্ডে গোপাল চন্দ্রের নাম না থাকা সত্তেও কোন চৌহদ্দি উল্লেখ না করেই ওই জমি লিখে নেওয়া হয় মুন্সিগঞ্জের টুঙ্গিবাড়ি সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে। এর কয়েক বছর পর নার্গিস আক্তার ইদ্রিস মাস্টারের রেজিস্ট্রিকৃত জমির একাংশ দখলের চেষ্টা চালালে আদালতের শরণাপন্ন হন ইদ্রিস মাস্টার। এরই মধ্যে নার্গিস আক্তার মারা গেলে তার স্বামী আবু সাইদ ওই জমি দখলে নিতে চেষ্টা করেন।
অপরদিকে, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ইদ্রিস মাস্টারও মারা যান। এ সুযোগে আবু সাইদের পক্ষে তারই ম্যানেজার সৈকত মিয়া ভাড়াটে লোক নিয়ে রাতের আঁধারে ওই জমিটি দখল করতে আসে। ভোরে প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যের ওই জমিতে অবৈধ দখল দেখে ছুটে আসেন এলাকাবাসী। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় ওই দখল উচ্ছেদ করে পুনরায় দখলমুক্ত করা হয় মৃত ইদ্রিস মাস্টারের উত্তরাধিকারীদের নামে থাকা ওই জমি। বর্তমানে আবু সাইদ জমিটি পুনরায় দখলের হুমকীসহ নানা মাধ্যমে নানা ধরণের হুমকী অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী এই পরিবারটির। এজন্য বিধবা স্ত্রী রুবিনা ইদ্রিস, দুই ছেলে, এক কন্যা সন্তান নিয়ে আশংকায় রয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা জাকারিয়া (৫৫) জানান, ১৯৯৩ সাল থেকে এই জমিটি ইদ্রিস মাস্টার রেজিস্ট্রি দলিল করে ভোগদখলে রয়েছেন। নার্গিস আক্তার বা আবু সাইদ নামে কেউ এখানে কোনদিন আসেননি। এখন হঠাৎ করে আবু সাইদ জমির একাংশ তাদের বলে দাবী করছেন। গত ১৪ জুলাই গভীর রাতে ভাড়াটে লোক নিয়ে জমি দখল করতে আসেন তার লোকজন। পরদিন এলাকাবাসী ওই অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে দেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আলিফ সরকার (৩৫) জানান, আমরা ছোটবেলায় এ জমিটি বাবুল দত্তের দেখেছি। পরে বাবুল দত্ত জমিটি ইদ্রিস মাস্টারের কাছে বিক্রি করে ভারতে চলে গেছেন। এরপর থেকে ইদ্রিস মাস্টার তার পরিবার নিয়ে বাসাবাড়ি করে এখানে ভোগদখলে রয়েছেন।
মৃত ইদ্রিস মাস্টারের বিধবা স্ত্রী রুবিনা ইদ্রিস (৬০) বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর ওরা (আবু সাইদ) আমাদের হুমকীতে রখেছে। আমরা ভয়ে থাকি সবসময়, কখন জানি আবার জমি দখল করতে আসে।
মৃত ইদ্রিস মাস্টারের বড় ছেলে আশিক মাহমুদ (৩৫) জানান, আমি পেশাগত কারণে অনেক দূরে থাকি। বাসায় আমার বৃদ্ধা মা, ছোট ভাই ও তার নববধূ এবং এক বোন থাকে। জমি দখল, মিথ্যা মামলা ও প্রাণনাশসহ আমাদের নানাভাবে হুমকী দেওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে হুমকীর কথা অস্বীকার করে ওই জমির দাবীদার আবু সাইদের পক্ষে তার ম্যানেজার সৈকত মিয়া জানান, নার্গিস আক্তার মারা যাওয়ার পর গোপনে কথিত ছোলেনামা করে বিষয়টি নিস্পত্তি দেখান ইদ্রিস মাস্টার, যা আদালতে টিকেনি। এ সময় তিনি দু’জনকেই জমির মালিক উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে আমাদের মালিকের অংশটি শুন্য ছিল। কিন্তু কিছুদিন আগে ইদ্রিস মাস্টার সম্পূর্ণ জায়গা দখলে নিয়ে তার বলে দাবী করেন। আমরা সে জায়গাটি দখলমুক্ত করতে গিয়েছিলাম।