শেরপুরে চাষ হচ্ছে সৌদি আরবের ত্বীন ফল। ত্বীন ফল মূলত মরু ভূমির সুস্বাদু ফল। এটি দেখতে কিছুটা ডুমুর ফলের মতো। বাংলাদেশে ত্বীন ফল ড্রাই ফ্রুটস হিসেবে আমদানি করা হয়। ত্বীন ফল মরুভূমিতে চাষ হলেও গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন অ লে এ ফলের চাষ শুরু হয়েছে।
কোরআন শরীফের সুরা ত্বীন এর মধ্যে যে ত্বীন ফলের বর্ণনা করা হয়েছে সেই ত্বীন ফল এবার শেরপুর জেলা শহরে প্রথম বারের মতো চাষ করা হচ্ছে। এ ফল চাষী আরিফুল আলম রাসেল তার বাড়ির ভিতর ১৫ শতক জমিতে মিশ্র বারোমাসি ফল বাগানের সাথে এ ত্বীন ফলের ২০ টি চারা রোপণ কনে। এক বছরের মাথায় প্রচুর ফল আসে গাছে। তবে এ ফল বিক্রি না করে নিজেরা এবং আশপাশের লোকজন এবং আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বিতরণ করেন চাষী আরিফুল আলম রাসেল। ফলন ভালো হওয়ায় তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আগামীতে আরো গাছের চারা রোপণ করবেন। বানিজ্যিকভাবে এই ত্বীন ফল বাগান কারার ইচ্ছে রয়েছে বলে জানান ত্বীন ফল চাষী।
শেরপুর পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের কান্দাপাড়া মহল্লার আরিফুল আলম রাসেল তার প্রায় দের একর পৈত্রিক বাড়ি ভিটার মধ্যে ১৫ শতক জমিতে কয়েক বছর আগে বারোমাসি মিশ্র ফল বাগান করেন। যা জেলা কৃষি বিভাগের মাধ্যমে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অ লের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি প্রকল্প থেকে প্রদর্শনী মাঠের সহযোগীতা করা হয়।
চাষী আরিফুল ইসলাম রাসেল জানান, তিনি যখন জর্ডানে সফরে যান তখন এ ত্বীন ফলের বাগান দেখেছেন। বাংলাদেশে এ ফলের বিশেষ করে শুকনো ত্বীন ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এক হাজার টাকা কেজি দরে শুকনো ত্বীন ফল বিক্রি হয়। তবে পাকা ফলেরও বেশ চাহিদা রয়েছে দেশে। তাই সে এ ত্বীন ফলের বাগান করার উদ্যোশে প্রাথমিকভাবে গত বছর জুন মাসে মাত্র ২০ টি চারা বগুড়া থেকে সংগ্রহ করে রোপন করেন তার মিশ্র বাগানে।
এক বছরের মধ্যেই ব্যাপক ফলন হয় প্রতিটি গাছে। তবে বর্তমানে ফল প্রায় শেষের দিকে। এ বছর তিনি ২০ টি গাছ থেকে প্রায় ৭ থেকে ৮ কেজি ফল পেয়েছেন। তা নিজেদের ও আত্মীয়দের মধ্যেই খাওয়া হয়। কোন ফল বিক্রি করা যায়নি। তারপরও ত্বীন ফল চাষের খবর পেয়ে আশাপাশের অনেক মানুষ ভীর করে ওই ত্বীন গাছ ও ফল দেখেতে। এসময় তারা বেশ আনন্দ উপভোগ করেন।
এদিকে, ত্বীন ফল গাছের খবর পেয়ে দূর থেকে আগত অনেক চাষী এ ফল বাগানের গাছের সৌন্দয্য উপভোগ এবং ফল দেখে নিজের এলাকায় এ ত্বীন ফল চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। রাসেলের বাড়ির লোকজনও এ ত্বীন চাষ নিয়ে বেশ খুশি। তারা আশা করছেন আগামীতে আরো বেশী করে গাছের চারা রোপন করবেন।
ত্বীন ফল নানা দেশে নানা নামে পরিচিত। ত্বীন ফলের গাছ বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমান্বয়ে ফল দেওয়ার হারও বৃদ্ধি পায়।
কৃষিবিদদের মতে, ত্বীন ফলের গাছে প্রথম বছরে ফল দেওয়ার হার ১ কেজি, দ্বিতীয় বছরে ৭ কেজি, তৃতীয় বছরে ২৫ কেজি। এভাবে ক্রমবর্ধমান হারে ৩৪ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। ত্বীন ফলের গাছের আয়ু সাধারণত প্রায় একশ বছর। তবে অবস্থা ও জাতভেদে এ পরিসংখ্যানের তারতম্য হয়। বাংলাদেশে ফলটি ত্বীন নামে পরিচিত হলেও বিশ্বের অন্যান্য দেশ যথাক্রমে মিশর, তুরস্ক, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং জর্দানে ‘আঞ্জির’ নামে পরিচিত এই ফল।
স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানায়, মাঠে ও ছাদে টবে লাগিয়ে ত্বীন ফল উৎপাদন করা সম্ভব। এটির কাটিং চারা লাগানোর চার থেকে পাঁচ মাস পর থেকেই ফল দিতে শুরু করে । প্রতিটি পাতার গোঁড়ায় গোঁড়ায় ত্বীন ফল জন্মে থাকে। এছাড়া প্রতিটি গাছ ছয় থেকে ৩০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। একটি গাছে ৭০ থেকে ৮০টি ফল ধরে। ত্বীন ফলে প্রচুর পরিমানের ভিটামিন- এ, বি, সি, কে, পটাসিয়াম, মেেগিনশিয়াম জিংক, আয়রন, কপারসহ কার্বোরাইড থাকায় বাজারে এর বেশ চাহিদা রয়েছে।
শেরপুর কৃষি বিভাগের পৌর এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মালেক জানান, আরব দেশের এ ত্বীন ফল নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী তারা। গাছ ও ফল দেখে তারা আশা করছেন প্রচুর ভিটামিন সমৃদ্ধ এ ত্বীন ফল চাষ বানিজ্যিক ভাবে করা সম্ভব। এ ফল চাষে কৃষকদের তারা নানা ধরনের সহযোগীতা ও পরামর্শ দিয়ে আসছেন।