পবিত্র রমজান মাসে ফজর থেকে মাগরিব পর্যন্ত না খেয়ে রোজা রাখে মুসলিমরা। কিন্তু এই উপবাস করার সময়টি পৃথিবীর সব জায়গায় এক নয়। মূলত সূর্য উদয় ও অস্ত যাওয়ার ওপর উপবাসের সময় নির্ভর করে।
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার এবং মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশে প্রতিদিন সাড়ে ১৩ ঘণ্টা থেকে ১৫ ঘণ্টা রোজা রাখতে হবে। রমজানের প্রথম দিনে বাংলাদেশে ১৩ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট রোজা রাখতে হবে।
অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকতে পারে এ বছর পৃথিবীর কোন এলাকার মানুষকে সবচেয়ে বেশি বা কম সময় সিয়াম পালন করতে হবে।
বেশি সময় রোজা রাখতে হবে যেসব দেশে
গাল্ফ নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর সবচেয়ে বেশি সময় না খেয়ে থাকতে হবে আইসল্যান্ডের বাসিন্দাদের। রমজানের প্রথম দিন অর্থাৎ ২৩ মার্চ সেখানে ১৫ ঘণ্টা ৩৩ মিনিট উপবাস থাকতে হবে। তাছাড়া শেষ রমজানের দিন সেখানে ফজর ও মাগরিবের মধ্যে ব্যবধান হবে ১৬ ঘণ্টা ২০ মিনিট।
নরডিক দেশ আইসল্যান্ডে এবার সবচেয়ে দীর্ঘ সময় রোজা থাকবেন রোজাদাররা। দেশটিতে গড়ে প্রায় ১৬ ঘণ্টা ৫০ মিনিট রোজা রাখতে হবে তাদের। তিউনিসিয়ার মুসলিমরা রোজা রাখবেন প্রায় ১৫ ঘণ্টা।
এছাড়া মধ্য প্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ১৩ থেকে ১৪ ঘণ্টা রোজা রাখতে হবে।
রমজানে রোজা রাখার ফজিলত
হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই দশগুণ থেকে সাতশত গুণ বৃদ্ধি করা হয়। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, কিন্তু রোজা ছাড়া। কেননা তা আমার জন্য, তাই আমি এর প্রতিদান দেবো। সে আমার সন্তুষ্টির জন্য কামাচার ও পানাহার পরিত্যাগ করে। রোজা পালনকারীর জন্য রয়েছে দুটি খুশী যা তাকে খুশী করে। যখন সে ইফতার করে, সে খুশী হয় এবং যখন সে তার রবের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন রোজার বিনিময়ে আনন্দিত হবে। রোজা পালনকারীর মুখের (না খাওয়াজনিত) ঘ্রাণ আল্লাহর কাছে মিসকের ঘ্রাণের চেয়েও উত্তম।” (বুখারি ১৯০৪, মুসলিম ১১৫১)
ধৈর্য তিন ধরনের। এ তিন ধরনের ধৈর্য রোজার মধ্যে একত্রিত হয়। আল্লাহর আনুগত্যের ওপর ধৈর্যধারণ করা, আল্লাহর হারাম জিনিস থেকে বিরত থাকতে ধৈর্যধারণ করা এবং আল্লাহর ফয়সালাকৃত কষ্টের ওপর ধৈর্যধারণ করা। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “রমযান মাস ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত।” (ইবন খুযাইমা ১৮৮৭)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “রোজা ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন রোজা পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। কেউ যদি তাঁকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি একজন রোজা পালনকারী।” (বুখারি ১৯০৪, মুসলিম ১১৫১)
হজরত আবু উবাইদাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, “রোজা ঢালস্বরুপ যতক্ষণ পর্যন্ত তা ভেঙ্গে না ফেলে।” (নাসাঈ ২২৩৫, মুসনাদে আহমাদ ১৬৯০)
ইমাম তিরমিজি ও অন্যান্যরা বর্ণনা করেন, “আল্লাহর শুকরিয়া আদায়কারী, আহারকারীর মর্যাদা হলো ধৈর্যশীল রোজা পালনকারীর মতো।” (তিরমিজি ২৪৮৬)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “জান্নাতে রাইয়্যান নামক একটি দরজা আছে। এ দরজা দিয়ে কেয়ামতের দিন রোজা পালনকারীরাই প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। ঘোষণা দেওয়া হবে, রোজা পালনকারীরা কোথায়? তখন তারা দাঁড়াবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। তাদের প্রবেশের পরই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ না করে।” (বুখারি ১৮৯৬)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে রোজা পালন করার তাওফিক দান করুন। রোজা ফজিলত ও মর্যাদা পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।