লিগ ওয়ানে ঘরের মাঠে ব্রেস্ট খুব কঠিন প্রতিপক্ষ ছিল না প্যারিস সেইন্ট জার্মেইঁয়ের জন্য। তবে প্রত্যাশা মাফিক দাপট দেখাতে পারেনি পিএসজি, ক্ষুরধার ফিনিশিংয়ের অভাব ছিল স্পষ্ট। নেইমার জুনিয়রের একমাত্র গোল ও ব্রেস্টের পেনাল্টি মিস, দুইয়ে মিলে ১-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরেছে ক্রিস্তোফ গালতিয়েরের শিষ্যরা। আর এ জয়ের ফলে পয়েন্ট তালিকায় নিজেদের শীর্ষস্থান ফিরে পেল প্যারিসের ক্লাবটি।
গতকাল খেলার শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দেয় প্যারিস। তবে মিলছিল না কাঙ্খিত গোলের দেখা। ৩০ মিনিটে পিএসজির অপেক্ষার অবসান ঘটান নেইমার। দারুণ দক্ষতায় মাঝমাঠ থেকে মেসির নিখুঁত লব ধরে বা পায়ের দারুণ ফিনিশিংয়ে জালে বল রাখেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। এটি ছিল চলতি মৌসুমে পিএসজির হয়ে তার ৮ম গোল।
গোল হজম করে প্রেসিং ফুটবল খেলা শুরু করে ব্রেস্ট। ৩৪ মিনিটে আবারও সু্যোগ তৈরি করেন মেসি। তবে তার ক্রসে পা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হন সার্জিও রামোস। জবাবে ৩৬ মিনিটে দারুণ এক ক্রসে প্যারিস রক্ষণে ত্রাস সৃষ্টি করে ব্রেস্ট।
এদিকে আজ ম্যাচের শুরু থেকেই মেসির পায়ে দেখা মিলেছে শৈল্পিক ফুটবলের। একের পর এক দারুণ সুযোগ গড়ে দিয়েছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। ব্রেস্ট ফুটবলাররাও ছিলেন বেশ আক্রমণাত্মক। নিজেরা আক্রমণ করার পাশাপাশি প্যারিস আক্রমণ রুখতে গিয়ে কয়েকবার মাটিতে লুটিয়ে পড়তে বাধ্য করেছেন মেসি-নেইমারদের।
প্রথমার্ধে গোল শোধের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েও সফল হতে পারেনি সফরকারীরা। এদিকে প্যারিসও গড়ে বেশ কিছু আক্রমণ। ৪৩ মিনিটে আরেকটু হলেই দলকে বিপদে ফেলেছিলেন ব্রেস্ট ডিফেন্ডাররা। নিজদের ভুলে নেইমারকে বল দিয়ে দেন তারা, ব্রাজিলিয়ান তারকাও দারুণ এক বল যোগান দেন লা পুল্গাকে।
নিশ্চিত গোল মনে হলেও ফিনিশিংটা ঠিকমতো করতে পারেননি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। এর কয়েক সেকেন্ড বাদেই আবারও প্যারিস ভক্তদের হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেন এমবাপে। নিজের অতিমানবীয় গতিতে বল নিয়ে ঢুকে পড়েন ব্রেস্ট রক্ষণে, পরাস্ত করেন ব্রেস্ট গোলরক্ষক মার্কো বিজোতকেও। তবে বেরসিক রেফারি বাজিয়ে বসেন অফসাইডের বাশি। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় আসলেও ডিফেন্ডারদের পার করে দাঁড়িয়ে ছিলেন ফরাসি তারকা।
বিরতির ঠিক আগে আরও একবার ব্রেস্ট রক্ষণ কাঁপান এমবাপে কিন্তু বিজোত ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে যায় পিএসজি।
দ্বিতীয়ার্ধেও মেসি-নেইমারদের বেশ কয়েকবার ফাউল করেন ব্রেস্ট ফুটবলাররা। ৪৬ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন দলটির ডিফেন্ডার ব্রেন্দান চাদুনেত। তবে গালতিয়ের বাহিনী আক্রমণ থামায়নি, ৪৯ মিনিটে আরও একবার গোলবঞ্চিত হন মেসি। ডিফেন্ডারদের ছাপিয়ে দারুণ এক লাফ দেন ক্ষুদে জাদুকর, হেডটাও করেব জোরালো। কিন্তু বিধি বাম, বারপোস্ট হয়ে দাঁড়ায় শত্রু।
৫৯ মিনিটে আবারও আসে সুযোগ। এবার সেটা নষ্ট করেন এমবাপে। নেইমার-মেসির দারুণ প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন ফরাসি তারকা। গোলরক্ষককে একা পেয়েও শট নেন বাইরে। এদিকে ব্রেস্টও ছাড়েনি হাল, তবে কার্যকর আক্রমণের মিলছিল না দেখা।
৬২ মিনিটে খেলোয়াড়ে বদল আনে ব্রেস্ট। গালতিয়েরও মার্কো ভেরাত্তিকে উঠিয়ে মাঠে নামান ফ্যাবিয়ান রুইজকে। ৬৭ মিনিটে দ্রুতগতিতে ছুটে মিডফিল্ড থেকে বাড়ানো বল ধরে ফেলেন আশরাফ হাকিমি। রাইট উইং দিয়ে ব্রেস্ট বিপদসীমায় ঢুকে পড়েন তিনি তবে দারুণ এক ট্যাকেলে সে যাত্রা বেচে যায় সফরকারীরা।
এর ক্ষানিক বাদে মেসির শট বেশ সহজে লুফে নেন ব্রেস্ট গোলরক্ষক। ৬৯ মিনিটে ম্যাচে ফেরার মোক্ষম সুযোগ পায় সফরকারীরা। কিম্পেম্বের ফাউলে পেনাল্টি পেয়ে যায় ব্রেস্ট। তবে ডোনারুমা বাঁ দিকে ঝাপিয়ে ঠেকিয়ে দেন ইসলাম স্লিমানির শট।
পেনাল্টি মিসের পর আরও দু’টি বদল আনে ব্রেস্ট। পিএসজি একাদশেও আসে বদল, ৭৬ মিনিটে নেইমার ও এমবাপেকে বেঞ্চে ডেকে নেন গালতিয়ের। ফুলব্যাক হুয়ান বার্নাতকেও নেন উঠিয়ে, তাদের বদলী হিসেবে নামেন পাবলো সারাবিয়া, নুনো মেন্ডেস ও হুগো একিতিকে।
এর এক মিনিট বাদেই ডোনারুমার অবিশ্বাস্য নৈপুণ্যে গোল হজমের হাত থেকে বেঁচে যায় প্যারিস। এদে বদল আসে তাদের খেলার ধরণে, শেষ ১০ মিনিট বলের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখে সাবধানী ফুটবল খেলে পিএসজি।
৮৫ মিনিটে দারুণ এক আক্রমণ গড়ে স্বাগতিকরা তবে বক্সের মধ্যে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন একিতিকে। তবে রেফারি খেলা চালিয়ে যাবার নির্দেশ দেন। নুনো মেন্ডিস ক্রস করলেও নিয়ন্ত্রণ ছিল না তাতে। ৯০ মিনিটে রেফারির বাঁশিতে কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায় খেলা। আগেই হলুদ কার্ড দেখা কিম্পেম্বে আবারও করে বসেন ট্যাকেল, মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ব্রেস্ট ফরোয়ার্ড।
খেলা শেষের ঠিক আগ মুহূর্তে ব্রেস্টের শেষ আক্রমণ আবারও ব্যর্থ করে দেয় প্যারিস রক্ষণ। রেফারিও বাজান সমাপ্তির বাঁশি। এই জয়ে লিগ টেবিলে নিজেদের শীর্ষস্থান আরো মজবুত করল ফরাসি জায়ান্টরা। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের খেলায় মাক্কাবি হাইফার মুখোমুখি হবে পিএসজি।