এ এম আব্দুল ওয়াদুদ
মা-বাবার হক যথাযথভাবে আদায় ও তাঁদের প্রতি সন্তুষ্টচিত্তে নেক নজরে তাকালে সন্তানের আমলনামায় কবুল হজের সওয়াব দান করেন আল্লাহ তাআ’লা।
কোন সন্তল হজের সওয়াব দেওয়া হবে।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পিতামাতার সেবার মাধ্যমে আল্লাহ তাআ’লার সন্তুষ্টি ও সওয়াব হিসাবে কবুল হজের সাওয়াবের কথা বিভিন্ন হাদিসে বর্ণনা করেছেন।সন্তানের সেবায় পিতামাতা সন্তুষ্ট হলে মহান আল্লাহ তাআ’লা সন্তানের আমলনামায় হজ, ওমরাহ ও জিহাদের সওয়াব লিখে দেন।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” مَا مِنْ وَلَدٍ بَارٍّ يَنْظُرُ نَظْرَةَ رَحْمَةٍ إِلَّا كَتَبَ اللهُ بِكُلِّ نَظْرَةٍ حَجَّةً مَبْرُورَةً “، قَالُوا: وَإِنْ نَظَرَ كُلَّ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ؟ قَالَ: ” نَعَمْ، اللهُ أَكْبَرُ وَأَطْيَبُ “
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যখন কোন পিতা মাতার ভক্ত সন্তান নিজের পিতা মাতার প্রতি অনুগ্রহের দৃষ্টিতে দেখে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতিটি দৃষ্টির বদৌলতে তার জন্য (আমলনামায়)একটি হজ্জ্বে মাবরূর (কবুল হজ) এর সওয়াব দান করেন। সাহাবারা আরজ করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি দৈনিক একশবার দৃষ্টি করে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তারও। আল্লাহ মহান ও পবিত্র।(শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৭৪৭২, কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৪৫৫৩৫, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-৪৯৪৪)
যখন কোনো অনুগত সন্তান নিজের মা-বাবার দিকে অনুগ্রহের নজরে দেখে, আল্লাহ তাআলা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সাওয়াব দান করেন।’(বায়হাকি-মিশকাত, পৃষ্ঠা : ৪২১)
হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে, ‘হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) বর্ণনা করেন। জনৈক ব্যক্তি নবীজি (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমি জিহাদে অংশগ্রহণ করতে চাই। কিন্তু আমার সেই সামর্থ্য ও সক্ষমতা নেই। নবীজি (সা.) প্রশ্ন করলেন, তোমার পিতামাতার কেউ কি জীবিত আছেন? লোকটি বলল, আমার মা জীবিত।প্রত্যুত্তরে নবীজি (সা.) বললেন, তাহলে মায়ের সেবা করে আল্লাহর কাছে জিহাদে যেতে না পারার অপারগতা বা ওজর পেশ কর। এভাবে যদি করতে পার এবং তোমার মা সন্তুষ্ট থাকেন তাহলে তুমি হজ, ওমরাহ এবং জিহাদের সওয়াব পেয়ে যাবে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর এবং মায়ের সেবা কর।(মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদিস নম্বর-১৩৩৯৯)।
সূরা নিসাতে আল্লাহ তাআ’লা পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন।
وَ اعۡبُدُوا اللّٰهَ وَ لَا تُشۡرِکُوۡا بِهٖ شَیۡئًا وَّ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا وَّ بِذِی الۡقُرۡبٰی وَ الۡیَتٰمٰی وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ الۡجَارِ ذِی الۡقُرۡبٰی وَ الۡجَارِ الۡجُنُبِ وَ الصَّاحِبِ بِالۡجَنۡۢبِ وَ ابۡنِ السَّبِیۡلِ ۙ وَ مَا مَلَکَتۡ اَیۡمَانُکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ مَنۡ کَانَ مُخۡتَالًا فَخُوۡرَا ﴿ۙ۳۶﴾
তোমরা আল্লাহর ‘ইবাদাত কর, কিছুকেই তাঁর শরীক করো না এবং মাতা-পিতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম অভাবগ্রস্ত, নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী, সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের আয়ত্তাধীন দাস-দাসীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ লোককে ভালবাসেন না, যে অহংকারী, দাম্ভিক। তাইসিরুল
পৃথিবীতে সওয়াব লাভের তিনটি মাধ্যম রয়েছে যার জন্য কোন পরিশ্রম করতে হয় না।তাহচ্ছে কাবা শরিফ, কোরআন শরিফ ও মা-বাবার চেহারার দিকে নেক নজরে তাকানো। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘যখন কোনো সন্তান নিজের মা-বাবার প্রতি অনুগ্রহের নজরে দৃষ্টিপাত করে, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সওয়াব দান করেন (বায়হাকি)।
আনাস রা. বলেন, এক ব্যক্তি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে এসে বলল, আমার জিহাদ করতে খুব আগ্রহ, কিন্তু সামর্থ্য নেই। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার মা-বাবা দুইজনের কেউ জীবিত আছেন কি? বলল, আমার মা জীবিত আছেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন
فَأَبْلِ اللهَ فِي بِرِّهَا،
قال العراقي في المغني:
তাহলে মায়ের সেবা করে আল্লাহ তাআ’লার সাথে সুন্দর সম্পর্ক স্থাপন কর। এটা যদি করতে পার এবং তোমার মা সন্তুষ্ট থাকেন তবে তুমি হজ্ব, ওমরাহ ও জিহাদের সওয়াব পেয়ে যাবে। সুতরাং আল্লাহকে ভয় কর এবং মায়ের সেবা কর।মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ২৭৬০; মুজামে আওসাত, তবরানী, হাদীস ২৯১৫
আল্লাহ তাআ’লা আমাদের প্রত্যেকেই
পিতামাতার সেবার মাধ্যমে আল্লাহ তাআ’লার সন্তুষ্টি ও কবুল হজের সাওয়াব অর্জন করার তাওফিক দান করুন।আমিন
লেখকঃশিক্ষার্থী, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়,ঢাকা।