“বাপুরে ধানের দর কম, আর কামলার (শ্রমিক) দাম খুব বেশি। হিলে ধান পইড়া গেছে, এমনিতেই লোকসান। এহন এক হাজার ট্যাহা কইরা কামলা দিয়ে ধান কাটলে ত সব শেষ। ধান ক্ষেতেই থাহুক কা, এইডা ত মরার উপর খাঁড়ার ঘা”
কথা গুলো বলছিলেন শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়নের কাজির চর গ্রামের কৃষক আবু বকর সিদ্দিক।
আবু বকর সিদ্দিকের মতো অন্যান্য কৃষকদেরও একই আপত্তি, শ্রমিকদের বাড়তি মজুরি নিয়ে।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় এবার জেলায় চলতি মৌসুমে ৯১ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।
জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, শ্রমিক সংকটের কারণে মজুরি বেড়েছে শ্রমিকের। ৯’শ থেকে একহাজার টাকা গুনেও শ্রমিক পাচ্ছে না তারা। আবার ধানের দর ৬’শ থে ৭’শ টাকা করে হওয়ায় লোকসানে কৃষক। বিশেষ করে যেসব এলাকায় শিলাবৃষ্টিতে ধান পড়ে গেছে, সেসব এলাকার কৃষকরা শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতেই চাচ্ছে না। তাদের ক্ষোভ, যে ধান পাবে তা দিয়ে শ্রমিকের মজুরির অর্ধেক খরচও উঠবেনা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড.মোহিত কুমার দে জানান, গত ১৯ এপ্রিল শিলাবৃষ্টিতে জেলার ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলায়।
সদর উপজেলার চরশেরপুর ইউনিয়নের যোগিনী মুড়া নামাপাড়া গ্রামের কৃষক আলমগীর আল আমিন বলেন, এবার রৌমারি থেকে শ্রমিক না আসায় সংকট দেখা দিয়েছে। ৮শ টাকা করেও যদি শ্রমিক নেওয়া হয়, দু-বেলা খাওন ও চাল খরচ দিয়ে হাজার বারো’শ টাকা পড়ে যায়। আর ধান বিক্রি করাও মুশকিল। ধানের পাইকার কম, দরও ৬’শ থেকে ৭’শ টাকা। আবার চুক্তি হিসেবে প্রতি ১০ শতাংশ বা এক কাঠা জমির ফসল কাটলে তাদের দিতে হচ্ছে এক হাজার থেকে তেরোশ টাকা। সবমিলিয়ে মরার উপর খরার ঘা।
শ্রীবরদী উপজেলার কুড়িকাহনিয়া কৃষক আবুল কালাম বলেন, এত কষ্ট করে রোদে পুড়ে আবাদ করেছি। শিলাবৃষ্টিতে এমনিতেই ধান পড়ে গেছে আবার এখন ১ হাজার টাকা করে শ্রমিক নিতে হচ্ছে। তাই ধান কাটতে পারছি না।
ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নের কৃষক আব্বাস আলি বলেন, কামলার যে দাম এহন, কামলা ত পাওয়াই যাইতেছে না। আর পাইলেও ১ হাজার টাকা করে দাম দিতে অইতেছে (হচ্ছে)। ধান ত পাইকাররা নিবার (নিতে) চায় না, আর নিলেও দর খুব কম। ক্ষেতে ধান আর আবাদ করমু না।
একই এলাকার আরও কৃষকরা জানায়, বাড়িতে তোলার পরে ধানমাড়াই কলে প্রতি কাঠা দুইশ করে দিতে হচ্ছে। পরে বাজারে ধান বিক্রি করতে গেলে ধান ব্যাপারীরা ধান দেখে নানা রকম টালবাহানা করে এবং শেষে ধানের দাম প্রতি মন ৬’শ টাকা থেকে ৭’শ টাকা দেয়। আবার বাকিতে নিলে ত আরও সর্বনাশ।
বাংলাদেশ কৃষক সমিতির শেরপুর সদর উপজেলার আহ্বায়ক সোলাইমান হোসেন জানান, এমনিতেই প্রাকৃতিক দূর্যোগে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধানের দরও কম। দুইমণ ধান দিয়ে একজন শ্রমিক নিতে হচ্ছে। একহাজার টাকা করে শ্রমিক নিয়ে কাজ করানো কৃষকের জন্য এ মূহুর্তে মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।