নেত্রকোনায় নদ-নদীসহ হাওড়াঞ্চলে ফের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। সোমবার বিকাল পর্যন্ত বিপৎসীমার ২৪ সেমি. ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। হাওড়ে পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষকদের মাঝে বাড়ছে আতঙ্কও।
এদিকে আগাম পূর্বাভাসের কারণে হাওরের ৬৮ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জেলার কৃষি বিভাগ। জেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও পাউবো পৃথকভাবে বিভিন্ন উপায়ে কৃষকদের দ্রুত পাকা ধান কাটার পরামর্শ দিচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার ১০টি উপজেলায় ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৩ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। শুধুমাত্র হাওড়াঞ্চলে ৪০ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে নিম্নাঞ্চলে বাঁধের বাইরে প্রায় ৬০০ হেক্টর জমির কাঁচা বোরো ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়। এ ছাড়া লেপসাই হাওড়, চৈতারা হাওড়সহ বিভিন্ন হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধের অন্তত ২০টি স্থানে ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। স্থানীয় পাউবো ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্ত স্থানগুলো সংস্কারকাজ করছে। তবে এখনো পর্যন্ত নেত্রকোনায় কোনো বাঁধ ভেঙে ফসলহানির ঘটনা ঘটেনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এফএম মোবারক আলী বলেন, এ বছর হাওড়াঞ্চলে ৪০ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়েছে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত হাওড়ের প্রায় ৬৮ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়েছে। চার-পাঁচ দিন সময় পেলে পুরো ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা।
খালিয়াজুরীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম আরিফুল ইসলাম রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বলেন, দ্বিতীয় দফায় ধনু নদের পানি বিপদসীমার ২৪ সেমি. ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে মাঝারি থেকে প্রবল বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদ-নদীর পানি বাড়ছে। হাওড়ে পাকা ধান কেটে দ্রুত ঘরে তোলার জন্য কৃষকদের বলা হচ্ছে। পানি বাড়লে বাঁধ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রেখেছি। আমরা রাতদিন বাঁধে অবস্থান করে বাঁধ ও ফসল রক্ষার চেষ্টা করছি।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত সোমবার বিকেল যুগান্তরকে বলেন, কীর্তনখলা বাঁধের অন্তত ২০টি জায়গা ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যাবে। সোমবার বিকাল পর্যন্ত খালিয়াজুরীতে অন্তত ১৫টি স্থানে বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। সেগুলো স্থানীয় শ্রমিকদের নিয়ে সংস্কার করেছি। আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি কমতে না থাকলে বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে।
নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান বলেন, হাওড়ে বাঁধগুলো রক্ষায় পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের ব্যবস্থাপনায় জেলায় নতুন পুরাতন মিলিয়ে প্রায় ১৪৫টি হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা চলছে। নতুন করে আরও ১১০টি হারভেস্টার মেশিন দেওয়া হয়েছে। সোমবার বিকাল পর্যন্ত হাওড়ে প্রায় ৬৮ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে।