ঐতিহ্যবাহী শেরপুর পৌরসভার যাত্রা শুরু হয় ১৮৬৯ সালে। এ বছর এ পৌরসভাটি ১৫২ বছরে পদার্পণ করেছে। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ পৌরসভার আয়তন ২৪.৭৫ বর্গকিলোমিটার। ৯টি ওয়ার্ডে ৪১টি মহল্লায় প্রায় ১ লাখ ১০ হাজার জন লোক বসবাস করছে।
বর্তমানে এটি একটি ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভা। বর্তমানে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন।
২০২১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারী চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী মামুনুর রশিদ পলাশকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে টানা দ্বিতীয় বারের মত ও তৃতীয় দফায় মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।
দীর্ঘ সময় ধরে মেয়র দায়িত্ব পালনকালে তিনি পৌর এলাকায় দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছেন। রাস্তাঘাট নির্মাণ ও সংস্কার, সড়কে বাতি স্থাপন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ অনেক কাজ হয়েছে।
তারপরও রয়ে গেছে অনেক সমস্যা। কিছু এলাকায় সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়।
শহরের অন্যতম কেন্দ্রস্থল গৃদ্দানারায়নপুর এলাকার আমনকুড়া বিল সংলগ্ন শহরের প্রবেশ মুখে ময়লা আবর্জনা ও বজ্য ফেলায় পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ও আশ-পাশের বসবাসকারী এলাকাবাসী বিড়ম্বনার স্বীকার হচ্ছে।
তবে শহরের অষ্টমীতলা এলাকায় বজ্য ফেলার জন্য ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়া এ পৌরসভার শহর ব্যতীত কিছু এলাকায় রাস্তা-ঘাট ভাঙাচোরা ও সড়কে বাতি নেই।
নাগরিক সংগঠন ‘জনউদ্যোগ’ শেরপুরের আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমান মেয়রের হাত ধরে পৌর এলাকায় দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে ঠিক। কিন্তু রাস্তা-ঘাটসহ যেসকল উন্নয়নমূলক কাজগুলো হয়েছে, কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের প্রধান সমস্যা হলো পৌরসভার রাস্তা-ঘাটের ফুটপাত গুলো বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা দখল করে রেখেছ। ফলে এ কারণে রাস্তা সংকুচিত, মারাত্নক যানযট, শব্দ দূষণ।
এসব অভিযোগের জবাব ও নিজের সফলতার কথা জানাতে শেরপুর টাইমসের মুখোমুখি হয়েছিলেন মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন।
তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালনের রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। পৌরসভার প্রায় আশি ভাগ সড়ক বাতির আওতায় এনেছি। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করেছি। ড্র্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের কাজও করছি। শহরের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বিভিন্ন ভাস্কর্য ও ফোয়ারা নির্মাণ করেছি।
মেয়র বলেন, উন্নয়নমূলক কাজে আমার আন্তরিকতার কমতি নেই। শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রচুর ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে এবং তারপরেও কিছুু কিছু স্থানে বর্ষাকালে ভারী বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতা তৈরী হয়, সেগুলোও নিরসণের জন্য আমরা এমজিএসপি প্রকল্পের আওতায় অনেক গুলো ড্রেন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেছি।
অনেক রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। তারপরেও কিছু ভাঙাচোরা রাস্তা রয়েছে। সেগুলো নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত করা হয়েছে । সম্প্রতি কিছু ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা আবার ফুটপাত দখল করেছে। প্রশাসনের সহায়তায় নিয়মিত উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ফুটপাত দখলমুক্ত করা হবে।
মেয়র বলেন, ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য ডাম্পিং স্টেশন ছিল না। কিন্তু ইউজিআইআইপি প্রকল্পের আওতায় শহরের অষ্টমীতলায় ডাম্পিং স্টেশনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। পৌরসভার নিজস্ব কোন আন্তঃজেলা বাসটার্মিনাল ছিল না, আমি শহরের অষ্টমীতলায় একটি দৃষ্টিনন্দন বাসটার্মিনাল নির্মাণ করেছি।
তিনি আরও বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারা দেশে যে উন্নয়ন চলছে। শেরপুর পৌরসভা এর বাহিরে নয়। রাস্তা, ড্রেন, ডাম্বিং স্টেশন, বাসটার্মিনাল ছাড়াও শেরপুরে শহীদ দারোগআলী পৌরপার্কে প্রায় ১২কোটি টাকা ব্যয়ে সম্পূর্ণ শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের কাজ চলমান।
মেয়র বলেন, আমার মূল লক্ষ্য হচ্ছে একটি সবুজ ও পরিচ্ছন্ন শহর গড়ে তোলা। সে জন্য দিনের পাশাপাশি রাত্রীকালীন পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালু করেছি। যা প্রশংসীত হয়েছে। সবুজ শেরপুর গড়ে তোলার লক্ষ্যে বৃক্ষ রোপণের পাশাপাশি পৌরভবনের ছাদের দৃষ্টিনন্দন ছাদ বাগান তৈরী করা হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী চারু ভবনকে রক্ষা ও শেরপুর পৌরসভার ইতিহাস ও ঐতিহ্যেকে ধরে রাখার জন্য পৌর জাদুঘর স্থাপন করেছে। সাংস্কৃতিককর্মীদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল একটি মুক্তমঞ্ছ। চারু ভবনের সামনে একটি মুক্তমঞ্ছ স্থাপন করেছি।
তিনি বলেন, পূর্ববতী নির্বাচনের সময় যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তার সিংহভাগ ভাগ পূরণ করেছি। এ কারণে আবারও পৌরবাসী আমাকেই নির্বাচিত করেছেন বলে আমার বিশ্বাস। এসডিজির ১৭টি ও জননেত্রী কেষ হাসিনার ১০টি বিশেষ উদ্যোগের একটি অন্যতম উদ্যোগ হল লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমাতায়ন। এ লক্ষ্যে শেরপুর পৌরসভা কাজ করে যাচ্ছে।
আমরা পৌর লেডিস ক্লাব ও কিশোরী ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছি। নারীদের জন্য বিভিন্ন কর্ম সংস্থান মূলক প্রশিক্ষণ এবং কিশোরী দের জন্য খেলাধূলার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। পৌর কিশোরী ক্লাবের একজন সদস্য স্কুল ব্যাটমিন্টনে জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।
পৌরসভায় ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, চেষ্টা করছি শতভাগ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে পৌরসভাকে পরিচালিত করতে। অনিয়মের অভিযোগ পেলেই দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে এলাকাকে মাদক বিক্রেতা এবং ইভটিজারদের প্রতিহত করতে জনসচেতনতা বাড়াতে সভা-সমাবেশ করছি। পৌর এলাকায় এখন সন্ত্রাস নেই বললেই চলে।
শিক্ষার মানোন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছি। কৃতী শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত এবং গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছি।
স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে নেয়া পদক্ষেপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিশেষ করে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে আমি এবং আমার স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা দিন-রাত পরিশ্রম করে সেবা দিয়েছি।