শুধু বৈশাখ নববর্ষ এলেই সাহেব-বাবুদের আমাদের কথা মনে পরে। বিশেষ করে পান্তা-ইলিশে আমাদের মাটির থালা দরকার হয়। এখন কেউ মনে রাখে না। এই পেশায় আয় কম, পরিশ্রম বেশি। এভাবে চললে এক সময় শেরপুর জেলা থেকে কুমার শিল্প হারিয়ে যাবে। সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসন নজর দিলে আমরা আরও ভালো কিছু করতে পারতাম।। আক্ষেপ করে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন হারাধন পাল।
শেরপুর সদর উপজেলার উপজেলায় রয়েছে ১৫-২০টি কুমার পরিবার। বৈশাখ আসার কয়েক মাস আগে থেকে তাদের মাটির জিনিসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করতে হতো। কিন্তু করোনায় আঘাত লেগেছে বিলুপ্তির পথে থাকা মৃৎশিল্পের ওপর।
সদর উপজেলার ভাতশালা ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নে রয়েছে কয়েকটি কুমার পরিবারের বসবাস। সরেজমিনে সদর উপজেলার কুমারপাড়ায় দেখা যায়, সেখানে সুনশান নীরবতা বিরাজ করছে। মাত্র ১৫-২০টি পরিবার টিকিয়ে রেখেছে বাপ-দাদার এ পেশাটিকে। মাটির জিনিসপত্র বিক্রি শূন্যের কোঠায় নেমে আসায় সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে হতদরিদ্র এই পরিবারগুলো। অভাবে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাদের কপালে। অথচ এক সময় বাংলার হারিয়ে যাওয়া এসব মাটির জিনিসপত্র ছাড়া গৃহস্থলির কাজকর্ম করা ছিল অসম্ভব।
মৃৎশিল্পের জাদুকর যুগল চন্দ্র পাল বলেন, আমার বংশের তিন পুরুষের হাল ধরে আছি। আমার দুই ছেলে মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য কাজ করছে। তারাই আমার বংশের শেষ ভরসা। আমরা না থাকলে মানুষ একসময় আমাদের খুঁজবে। কিন্তু তখন মাটির জিনিসপত্র বানানোর লোক খুঁজে পাবে না।
শিল্পী নামে একজন বলেন, মাটি খরচ, লাকড়ি পুড়ানো সব মিলে লাভ কম। তবুও আদি পেশা হওয়ায় এখনও হাল ধরে আছি। শুধু বাংলা নববর্ষ এলে শহরের ধনীদের আমাদের কথা মনে পড়ে। বিশেষ করে পান্তা-ইলিশে আমাদের মাটির থালা দরকার হয়। তখন কিছু টাকা আয় করা যায়।
মাটির দুষ্প্রাপ্যতার সঙ্গে শ্রমিকের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মাটির তৈজসপত্র তৈরি ও বিক্রয়ে খুব একটা লাভের মুখ দেখছেন না তারা। তাদের অভিযোগ সরকারের অর্থনৈতিক সাহায্য সহযোগিতা না পেলে এ শিল্প টিকিয়ে রাখা কখনই সম্ভব হবে না।
মানবাধিকার কর্মী আলমগীর আল আমিন বলেন,বাংলার মৃৎশিল্পের সেই সুদিন আর নেই। এক সময় কুটুমবাড়িতে পিঠা, পুলি, মিষ্টি, সন্দেশ ইত্যাদি পাঠাতে চিত্রিত এ হাঁড়ি ব্যবহার করা হতো। এখন ব্যবহার কমলেও, মুগ্ধতা কাটেনি। সরকারের অর্থনৈতিক সাহায্য সহযোগিতা না পেলে এ শিল্পের বিকাশ ঘটবে।
শেরপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ ফিরোজ আল মামুন বলেন, আমি পালপাড়ার স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বলেছি। সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা পেলে তাদের পৌঁছে দেওয়া হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যংক অল্প সুদে ঋণ দেয়। পালপাড়ার কেউ যদি সেই ক্ষুদ্র ঋণ নিতে চায় তাহলে উপজেলা প্রশাসন তাদের সহযোগিতা করবে।