আট বছর বয়সে হঠাৎ করেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে আল্পনা। এরপর প্রাথমিক চিকিৎসা করা হলে কিছুদিন একটু সুস্থ থাকার পর আবার আগের মতো অসুস্থ হয়।
পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে আর চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি আল্পনার। তার বয়স বর্তমানে ২০ বছর। প্রায় ১২ বছর ধরে পায়ে শিকল দিয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে বিভিন্ন খুঁটির সাথে।
তার বাড়ি শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গুরুচরণ দুধনই গ্রামে। সেখানে তার বাড়িতে শিকল বন্দি জীবন পার করছেন আল্পনা। তার বাবা ভূমিহীন কৃষক ছিদ্দিক আলী নিজেও অসুস্থ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের একটি ঘর পেয়েছে পরিবারটি।
স্থানীয়দের সহায়তা নিয়ে অনেক কষ্টে সংসার চালান তার মা আছিয়া বেগম। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় সে বাড়ি ছেড়ে এদিক-সেদিকে চলে যায়। এ জন্যই পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে।
পরিবার সূত্রে জানান গেছে, ছয় ভাইবোনের মধ্যে আল্পনা তৃতীয়। আল্পনার জন্ম ২০০১ সালে। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০০৮ সালে ঢাকায় বোনের বাসায় বেড়াতে যায় আল্পনা। সেখানে হঠাৎ করেই জ্বর ওঠে তার। এরপর থেকেই দেখা দেয় মানসিক সমস্যা। এরপর প্রাথমিক চিকিৎসা করা হলে কিছুদিন একটু সুস্থ থাকার পর আবার আগের মতো অসুস্থ হয়। ২০০৯ সাল থেকে তাকে শিকলবন্দি করে রেখেছে তার পরিবার।
বাবা ছিদ্দিক আলী বলেন, মেয়েটার চিকিৎসা করাতে আমার ১০ শতাংশ জমি, পাঁচটা গরু বিক্রি করেছি। ২০ হাজার টাকা ঋণও করছি। ইচ্ছা থাকার পরেও টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না।
মা আছিয়া বেগম বলেন, সরকার আমাদের একটা ঘর দিছে। ওই ঘরের একটা রুমে আল্পনা থাকে। এখন পর্যন্ত আমার মেয়েটার প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড পায়নি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হযরত আলী বলেন, আমি অনেক দিন থেকে মেয়েটিকে শিকল বন্দি অবস্থায় দেখছি। আগে ভালো ছিল। চিকিৎসা ঠিকমতো করায়নি, করালে হয়তো মেয়েটা সুস্থ হতো।
তিনি আরো বলেন, আমরা এলাকাবাসী কিছু টাকা উঠাইয়া দিছিলাম। ওই টাকা দিয়ে তো কিছুই হয় নাই। এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষ গরিব, তাই তারাও টাকা দিতে পারছে না। আমরা চাই সরকারিভাবে মেয়েটির চিকিৎসা করানো হউক।
শেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম আনোয়ারুর রউফ বলেন, শিকল দিয়ে আটকে করে রাখাটা অমানবিক কাজ। মানসিক সমস্যার চিকিৎসা তো আছে। আমরা যোগাযোগ করে ওই মেয়ের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ বলেন, শিকলে বন্দি করে রাখার বিষয়টি শুনিনি। আপনাদের মাধ্যমে জানলাম। আমি দ্রæত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।