‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি’ এ প্রবাদকে সত্য হিসেবে প্রমাণ করেছেন মৎস্যচাষী মাসুদুর রহমান। মাসুদুর রহমান এ বছর শেরপুরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষী হিসেবে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছেন। পরিশ্রমই তাঁর সফলতার মূল চাবিকাঠি। আত্মপ্রত্যয়ী মাসুদুর শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে।
তিনি এখন একজন সফল মৎস্যচাষী হিসেবে সকলের কাছে পরিচিতি পেয়েছেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল গ্রামে একটি মৎস্য খামার গড়ে তুলবেন। তাঁর সেই স্বপ্ন শুধু বাস্তবায়নই করেননি, মাছ চাষ করে জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন দুইবার। অর্জন করেছেন অভাবনীয় সাফল্য। মাছ চাষে সফলতা অর্জন করায় জেলা প্রশাসন ও মৎস্য অধিদপ্তর তাঁকে গত ২৪ জুলাই পুরস্কার হিসেবে সম্মাননা দিয়েছেন।
মাসুদুর রহমান ২০০৭ সালে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হন এইচএসসিতে। এইচএসসি পরীক্ষা শেষ না হতেই জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে মৎস্য বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি শেরপুর সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর করছেন। মাসুদুর ২০১০ সালে নিজেদের অর্ধ একর জমি নিয়ে নির্মিত পুকুরে ৩০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে শুরু করেন মাছ চাষ।
এখন তিনি ছোট-বড় ৭টি পুকুর নিয়ে আল মাসুদ এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ নামে গড়ে তুলেছেন একটি মৎস্য খামার। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে এ পুকুরগুলোয় মিশ্র কার্প, পাঙ্গাস, গুলশা, পাবদা, শিংসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা হ্যাচারি থেকে সংগ্রহ করেন। পরে এসব পোনা পুকুরে ছেড়ে দেওয়ার পর ৮ মাস ধরে মাছগুলো খাবার ও প্রয়োজনীয় ওষুধ দিয়ে বড় করে মে মাস থেকে দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে ট্রাকযোগে বিক্রি করা হয়। তাঁর খামারে মাছের খাবার দেওয়া, জাল দিয়ে মাছ ধরা ও পরিচর্যায় দুইজন শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। কর্মচারীদের বেতন ও আনুষাঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে প্রতি মাসে তাঁর আয় প্রায় লাখ টাকার কাছাকাছি।
এ বছর মাছ চাষ থেকে তাঁর ৮ লাখ টাকার বেশি লাভ হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে মাসুদুর এখন স্বাবলম্বী। তাঁর এ সফলতা উপজেলায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তাঁর সফলতা দেখে অনেক বেকার যুবক উৎসাহিত হয়ে মাছ চাষ শুরু করেছেন। সরেজমিনে মাসুদুরের মৎস্য খামারে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকদের সঙ্গে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তিনি। কখনো পুকুরে মাছের খাবার দিচ্ছেন, আবার কখনো পুকুরে জেলেদের সাথে মাছ ধরছেন। মৎস্যচাষী মাসুদুর রহমান বলেন, মৎস্য খামার স্থাপনের ছয় মাস পর থেকেই তিনি মাছ বিক্রি শুরু করেন। উপজেলা মৎস্য অফিসারের পরামর্শে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করছেন। ফলে মাছের বৃদ্ধিও ভালো হচ্ছে।
এ বছর প্রায় ২৪ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেন। খরচ বাদে ৮ লাখ ১৬ হাজার টাকা আয় হয়েছে তাঁর। তিনি আরো জানান, মৎস্য চাষিদের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে মাছ চাষ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান বলেন, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় মাসুদুরের খামারের মাছের গুণগত মান ভালো। প্রতি সপ্তাহে তিনি মাসুদুরের খামার থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মাছ কিনেন। উপজেলা মৎস্য অফিসার এমদাদুল হক বলেন, আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর মাছ চাষ করে মাসুদুর পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁকে দেখে এ এলাকার অনেকে এ ধরনের মাছ চাষে উৎসাহিত হয়েছেন।
মাসুদুরের স্বপ্ন খামার আরও বড় করার। দেশের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরেও যাবে তাঁর খামারের মাছ। তৈরি করবে নতুন কর্মসংস্থান। সরকারসহ সকলের সহযোগিতা পেলে তাঁর এ স্বপ্ন একদিন সত্যি হবে বলে তিনি আশা করেন।