ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তরগত শেরপুর জেলা শহরের পৌর এলাকার পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত কসবা একটি ঐতিহাসিক স্থান।
শাহজাদা সুজা ১৬৩৯ থ্রিঃ থেকে ১৬৬০ থ্রিঃ পর্যন্ত সুদীর্ঘ ২১ বছর কাল কসবায় রাজধানী স্থাপন করে অত্র অঞ্চলের শাসনকার্য পরিচালনা করেছিলেন।
তাঁদের বসতবাড়ি খুব সম্ভব কাঠের স্থাপনা হতে পারে। কেননা তিনটি ইটের স্থাপনা ছাড়া আর কোন প্রমাণ অবশিষ্ঠ নেই । বসতবাড়ি নির্মাণ বা চাষাবাদের ফলেও তা ধ্বংস হতে পারে।
শেরপুর পরগণার প্রশাসনিক কেন্দ্র বিন্দু ছিল কসবা। কসবা একটি ফরাসি শব্দ । কসবা শব্দটির আভিধানিক অর্থ জনপদ অথবা উপশহর। ভারতবর্ষে সেইসময় মুসলিম শাসনামলে বিভিন্ন জনপদের এ নামকরণ করা হয়।
কসবা গ্রামটি আয়তনে বেশ বড় এবং ছোট ছোট এলাকায় বা পাড়ায় বিভক্ত ও পৃথক পৃথক নাম ছিল
উক্ত সময়ে মোঘলরা তাঁদের বসত বাড়ীর পাশে একটি মসজিদ নির্মান করেন। এটিই কসবা “মুঘল মসজিদ” নামে পরিচিত ছিল। মসজিদটি কালক্রমে বিলীন হয়ে যায়।
বর্তমানে এই মসজিদকে ঘিরে যে ঘনবসতিপূর্ণ ছোট পাড়াটি গড়ে উঠেছে তাকে মুঘল পাড়া বলা হয়। এলাকাবাসী উক্ত স্থানে শাহী মসজিদ নামে নতুন একটি মসজিদ নির্মাণ করেছেন ।
এখানে মোগল মসজিদ ছাড়াও মোগলদের শাসন কাযের্র বেশকিছু নিদর্শন রয়েছে যেমনঃ কাঠগড়, কাচারীপাড়া, কাজীগলি ও কাজীগলি মসজিদ, মুঘল বাড়ীর চারদিকে জঙ্গলি পরিখা, কাঠগড় বা কাঠের কেলা ইত্যাদি । বর্তমানে জঙ্গলি পরিখা ছাড়া মুঘল বাড়ীর চারদিকের কোন চিহ্ন নেই ।
স্থানীয়রা জানায় বাড়ির ভেতরের পুকুরটি এখনও আছে যা তালা পুকুর নামে পরিচিত এবং মুঘল মসজিদটি ১৮৯৭ সালে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে দেবে যায়। বসতবাড়ি স্থাপনের জন্য মুঘল বাড়ীর চিহ্নগুলোও হারিয়ে গিয়েছে । প্রত্নতত্ত বিভাগ বা সথানীয় প্রশাসন কেওই মোগলদের এই স্থানটি সংরক্ষণের কোন পদক্ষেপ নেইনি।
কসবাতে মোগলরা কাচারী স্থাপন করেছিলেন । কাচারীর সকল কাজ বর্তমান কসবা কাচারী পাড়ায় হত । কাচারী পাড়ায় কাচারীর কোন স্বৃতিচিহ্ন অবশিষ্ঠ নেই। তবে তার পাশে কাজীগলি নামে একটি পাড়া আছে তাতে পুরনো একটি ভঙ্গুর মসজিদ চোখে পড়বে। ধারণা করা হয় কাজীর বাড়ী কাচারী বা বিচারালয় এর আশেপাশে কোথাও ছিল। যা খুব সম্ভব কাঠের স্থাপনা হতে পারে। কাচারীর পুরনো ভঙ্গুর মসজিদের বকের ইটের সাথে মুঘল মসজিদের ইটের হূবূহূ মিল আছে।
এলাকাবাসীর দাবী কাচারীর প্রধান কাজীর কবরটি কাজীগলিতে বর্তমান কাজীগলি মসজিদের পূর্ব উত্তরে আছে।
কাজীর কবরের বকের ইটের সাথে কাজীর মসজিদের ইটের এবং মোগল মসজিদের ইটের হূবূহূ মিল পাওয়া যায়।
শাহজাদা সুজার বাংলার শাসন ভার গ্রহনের প্রথম পর্যায়ে মুঘলরা যখন বর্তমান শেরপুর শহরের কসবায় রাজধানীর কার্যক্রম আরম্ভ করেন তখনও হযরত শাহ কামাল (র.) জীবিত ছিলেন এবং দুরমুট বা বাকলাইতে অবস্থান করছিলেন। কসবায় বসবাসকারী মুঘলরা শাহ কামাল (র.) এর অলৌকিক ক্ষমতার কথা জানতে পারেন এবং তাদের প্রশাসনিক কেন্দ্রের কাছে এনে কাজি গলির পশ্চিমে তাকে জায়গা প্রদান করে বসবাসের ব্যবস্থা করেছিলেন। মাজারটি প্রায় ১ একর ৭৬ শতাংশ জায়গা জুড়ে অবস্থিত। এর পূর্ব পাশে একটি ঈদগাহ মাঠ এবং পশ্চিম পাশে রয়েছে একটি মসজিদ। মাজারটিতে হযরত শাহ কামাল (র.) সহ তার সফরসঙ্গী, ব্যবহৃত ঘোড়া ও মাজারের তিনজন খাদেমের কবর রয়েছে বলে জানা যায়।
পরবর্তীতে এ স্থানটিই হযরত শাহ কামাল (র.) এর মাজার হিসেবে পরিচিত লাভ করে। তিনি ১৬৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেন। কথিত আছে, হযরত শাহ কামাল (র.) ইন্তেকাল করার সংবাদটি একইসঙ্গে ৭টি স্থানে প্রচার হয়। স্থানগুলো হলো, জামালপুর জেলার দুরমুট ও কামালপুর, শেরপুর জেলা শহরের কসবা, নেত্রকোনা জেলার শাহ সুলতান র“মীর মাজার, ময়মনসিংহ জেলার সুসং দুর্গাপুর, চট্টগ্রামের বারো আউলিয়া ও দিলীর আব্দুল কাদের জিলানীর চিলা খানায়।
গারো পাড়াঃ
কসবা গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে ছোট নয়নাভিরাম সবুজ পাড়ার নাম গারো পাড়া। এখানে প্রায় ৩০-৪০ টি বাড়ি নিয়ে এ পাড়াটিতে প্রায় ২৫০-৩০০ লোকের বসবাস। এ পাড়ায় বর্তমানে শিশুদের শিক্ষার হার প্রায় ৯৫ ভাগ। বেশিরভাগ লোকজন কৃষিকাজ, দিনমজুর ও কিছু সংখ্যক লোক ব্যাবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে। দুইটি গির্জা ঘর আছে এবং শতভাগ খৃষ্টান ধর্মালম্বি।
কিভাবে যাওয়া যায়ঃ
ঐতিহাসিক স্থানটি পরিদর্শন করতে ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে শেরপুর যেতে হবে বাস ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকায় (এসি বা নন এসি) শেরপুর পর্যন্ত। তারপর শেরপুর শহর থেকে পশ্চিম দিকে জেলা পরিষদ এবং খান বাড়ীর সামনে দিয়ে কসবা কাঠগড় এলাকায় যেতে হবে অথবা বাইরবাদ মসজিদের দক্ষিণ পাশের বাইপাস রাস্তা দিয়েও যাওয়া যায়। শহর থেকে ৫-১০ টাকা অটো রিকশা ভাড়া লাগবে। অতঃপর, শাহ কামাল (র.) এর মাজার দেখতে চাইলে কসবা কাঠগড় থেকে পায়ে হেটে ৫-১০ মিনিট লাগবে অথবা শেরপুর পৌর শহর থেকে পশ্চিম দিকে লোকাল বাস স্ট্যান্ড এর পশ্চিমে ৫ টাকা অটো রিকশা ভাড়া। কাজীর মসজিদ এবং কবর তার ৫০০-৭০০ মিটারের আশেপাশে।
গবেষণা, অনুসন্ধান ও সংকলনঃ
মোঃ নাজিমুল হাসান খান
এম, এস, সি (জঃ বিঃ)