শেরপুরে পৃথক ঘটনায় সদর উপজেলার গাজীর খামার ইউনিয়নে এক মাদ্রাসা শিক্ষক, নালিতাবাড়ী উপজেলায় এক কৃষি শ্রমিক ও শ্রীবরদী উপজেলায় এক যুবককে বিষ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। খুনের ঘটনায় ১৪ জুলাই দু’টি পৃথক হত্যা মামলা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত ৫ জনকে পুলিশ আটক করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েকমাস আগে শেরপুর সদর উপজেলার গাজীর খামার ইউনিয়নের বুড়িয়ারপাড় গ্রামের মৃত জসীম উদ্দিনের ছেলে মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা আক্কাস উদ্দিন (৫৫) প্রতিবেশী সলিমুল্লাহর ছেলে আনার মিয়ার (৩২) কাছে অটোরিকশা বিক্রি করে। কিছু টাকা বাকী রেখে আনার মিয়া অটোরিকশাটি নিয়ে যায়। শিক্ষক আক্কাস শর্ত দেন টাকা পরিশোধ করলে তিনি গাড়ীটি লিখে দেবেন। মাস খানেক আগে আক্কাস টাকা চাইলে আনার জানায় গাড়ীর ব্যাটারীসহ অনেক মালামাল নষ্ট, তাই সে আর কোন টাকা দেবেনা। এসময় তিনি অটোরিকশাটি লিখে দেওয়ার জন্য আক্কাসকে চাপ দেন। বৃহস্পতিবার রাতে মাওলানা আক্কাস তাঁর ধর্ম শ্বশুর একই গ্রামের আওয়াল মাষ্টারের ছেলের বিয়েতে যান। বিয়ে শেষে ওই বাড়ীতে আনার তাঁর দলবল নিয়ে হাজির হয়ে গাড়ীটি লিখে দিতে বলেন। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে আনার মাওলানা আক্কাসকে আওয়াল মাষ্টারের বসতঘরের পিছনে নিয়ে হত্যা করে ফেলে রেখে চলে যায়।
খবর পেয়ে সদর থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম এসে লাশ উদ্ধার করে জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠান। পরে রাতেই অভিযান চালিয়ে পুলিশ হত্যার সাথে জড়িত শহিদুল ইসলাম (৩৮) ও আলামিন (২০) নামে দুই যুবককে আটক করে। এ ঘটনায় শুক্রবার নিহতের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন বাদী হয়ে আনারকে প্রধান আসামী করে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৬ জনকে আসামী করে সদয় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে নালিতাবাড়ী উপজেলার বাতকুচি গ্রামের কৃষি শ্রমিক সাদির আলীকে (৬০) তাঁর বেয়াই আবেদ আলী কিল- ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দিলে তিনি ঘটনাস্খলেই মারা যান। জানা গেছে, নিহত সাদীর আলীর ছেলে হোসেন আলীর সাথে ৩ বছর আগে ডালুকোনা গ্রামের আবেদ আলীর মেয়ে আছমার বিয়ে হয়। আবেদ আলীর জামাইকে বেশ কয়েকবার টাকা পয়সা দিলেও সে ব্যবসা না করে তা নষ্ট করে ফেলে। হোসেন আলী তাঁর স্ত্রী আছমাকে নিয়ে ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টে চাকুরী করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ ঘটনা জেনে আবেদ আলী বৃহস্পতিবার রাতে বেয়াই বাড়ী যান। এ সময় তিনি মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বাধা দেন। তর্কাতর্কির একপর্যায়ে আবেদ আলী বেয়াই সাদীর আলীকে কিল-ঘুষি মারলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়ে জ্ঞান হারান। তাকে উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আবেদ আলী, তার স্ত্রী মাহফুজা বেগম ও মেয়ে আছমাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। শুক্রবার সকালে নিহতের লাশ ময়না তদন্তের জন্য শেরপুর জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে একই রাতে শ্রীবরদী উপজেলার কেকেরচর ইউনিয়নের লঙ্গরপাড়া পোড়াগাঁও গ্রামে জামাই সাইদ মিয়া (৩২) কে বিষ প্রয়োগ করে হত্যার অভিযোগ উঠেছে শ্বশুর বাড়ীর লোকজনের বিরুদ্ধে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর সদর উপজেলার গাজীরখামার ইউনিয়নের কুড়ালিয়া কান্দার হারুন মিয়ার ছেলে সাইদ তাঁর শ্বশুর হবিবর রহমানের কাছে টাকা পেতো। বার বার টাকা চাইলেও শ্বশুর তাঁর পাওনা টাকা দিচ্ছিলেন না। মঙ্গলবার টাকা আনতে তিনি স্ত্রীসহ শ্বশুরবাড়ী যান। বৃহস্পতিবার রাতে বিষ খেয়েছে প্রচার করে সাইদকে শেরপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষনা করেন। মৃতের আত্মীয়-স্বজন অভিযোগ তুলেছেন যে সাইদকে পরিকল্পিতভাবে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়েছে।
এসব ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, তিনটি ঘটনার পৃথক তদন্ত হচ্ছে। ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে।