শেরপুরে মেধাবী কলেজছাত্রী আশরাফুন্নাহার লোপাকে নির্যাতনের চাঞ্চল্যকর মামলায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় অবশেষে নিম্ন আদালতে জামিননামা দাখিল করল যৌতুকলোভী পাষন্ড স্বামী ডিএমপি পুলিশের এসআই শাহিনুল ইসলাম। ১২ জুলাই বুধবার বিকেলে হাইকোর্ট থেকে ৪ সপ্তাহের অর্ন্তবর্তী জামিন আদেশের শেষ দিনে ভারপ্রাপ্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোমিনুল ইসলামের আদালতে হাজির হয়ে জামিননামা দাখিলের আবেদন জানালে ১০ হাজার টাকার মুচলেকায় তা মঞ্জুর করা হয়। তবে উচ্চ আদালতের ওই নির্দেশনা মোতাবেক বুধবার পর্যন্তই তার জামিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। এরপর নিম্ন আদালতেই তার নতুন জামিনের আবেদন করতে হবে।
অন্যদিকে মামলার দীর্ঘ ১ মাস ৭ দিন অতিবাহিত হলেও আজও আদালতে করানো হয়নি লোপার ২২ ধারার জবানবন্দি। এখনও চাওয়া হয়নি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল সার্টিফিকেট। এছাড়া কোন তৎপরতা নেই সহযোগী আসামীদের গ্রেফতারে।
এ বিষয়ে লোপার মা ও মামলার বাদী স্কুলশিক্ষিকা সেলিনা আক্তার লাকী বলেন, ৫ জুন শ্রীবরদী থানায় এসআই শাহীন ও তার পরিবারের ৫ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ডের পর ১৫ জুন শাহীন হাইকোর্ট থেকে ৪ সপ্তাহের অর্ন্তবর্তী জামিন নিয়ে এসে নানা ফন্দি-ফিকিরসহ থানায় ঘুরাফেরা করছে। আর অন্যরা জামিন না নিয়ে আসলেও প্রকাশ্যেই বাড়ি-ঘরে অবস্থান করছে। তিনি আরও বলেন, লোপাসহ সকল সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলেও এখনও আদালতে লোপার জবানবন্দি গ্রহণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এদিকে সহযোগী আসামীদের গ্রেফতার ও নির্যাতিতা লোপার জবানবন্দি গ্রহণ না করা এবং মূল আসামীর থানায় ঘুরাফেরার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি রাজিয়া সামাদ ডালিয়া, জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি জয়শ্রী দাস লক্ষ্মী ও জনউদ্যোগ আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ। তারা অবিলম্বে সহযোগী আসামীদের গ্রেফতারসহ সকলকে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান।
এ ব্যাপারে শেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম জানান, ঘটনার বিষয়ে তদন্ত শেষ হয়েছে। তদন্তে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় অভিযোগপত্র দাখিলে প্রস্তুতি চলছে। এক্ষেত্রে ভিকটিমের জবানবন্দি গ্রহণের খুব একটা প্রয়োজন মনে হয়নি।
উল্লেখ্য, শেরপুর শহরের দমদমা মহল্লার ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলামের একমাত্র কন্যা ও সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী লোপাকে পার্শ্ববর্তী শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা ইউনিয়নের ঘোনাপাড়া গ্রামের বাড়িতে গত ২২ মে রাতে ২০ লাখ টাকার যৌতুকের দাবি আদায়ে ব্যর্থ হয়ে অমানসিক নির্যাতন চালায় স্বামী এসআই শাহিন ও তার পরিবারের লোকজন। ওই ঘটনায় মামলার পর পাষন্ড স্বামী এসআই শাহীনসহ সহযোগীদের গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে ফুঁসে উঠে স্থানীয় মহিলা পরিষদ ও মানবাধিকার কমিশনসহ বিভিন্ন সংগঠন।