ঐতিহ্যবাহী প্রথম শ্রেণির মর্যাদাপ্রাপ্ত শেরপুর পৌরসভা এলাকায় একাধিক কাজীর শূন্যপদ পূরণে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষিত হচ্ছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিচার শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব জিএম নাজমুস শাহাদাতের ২ জুলাই সাক্ষরিত পত্রে ওই শূন্যতা পূরণে জেলা রেজিস্টারসহ সদর সাব-রেজিস্টারকে নির্দেশ দেওয়া হলেও ৮ দিনেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে মুসলিম বিবাহ ও তালাকের বিষয়ে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। এ নিয়ে খোদ শহরে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।
সুত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনকারী মোহসীন আলী কাজীর মৃত্যুর পর থেকেই ১৮৬৯ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রথম প্রতিষ্ঠিত শেরপুর পৌরসভা এলাকায় আবু জাফর মোঃ সালাউদ্দিন ও মোঃ হযরত আলী কাজীর দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ১৯৯৮ সনের দিকে সালাউদ্দিন কাজী মারা গেলে একই বছরের ৫ অক্টোবর তার স্থলাভিষিক্ত হন রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী তারই জ্যেষ্ঠ পুত্র জুবায়ের ইবনে সালেহ। এরপর সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে জুবায়ের ইবনে সালেহ’র দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তারই সহোদর ছোট ভাই আবুজার মোঃ আল আমিন। ওই অবস্থায় ২০০২ সালে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় প্রতি ওয়ার্ডে একজন করে কাজী নিয়োগের বিধান চালু হলে অনেক তথ্য গোপন করে ২০০৭ সালের ১৪ নবেম্বর আবুজার মোঃ আল আমিনের নামেও কাজীর পৃথক লাইসেন্স নেওয়া হয়। কিন্তু দু’জনের কাজ একাই করে আসছিলেন কাজী আল আমিন। অন্যদিকে পৌরসভার অপর প্রবীণ কাজী হযরত কাজী ২০১৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মারা গেলে পৌরসভার পুরো কর্তৃত্ব বর্তায় কাজী আল আমিনের উপর। ফলে দু’ভাইয়ের দৌরাত্মও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ২০০৯ সালের সংশোধনী অনুযায়ী প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে প্রতি ২ ওয়ার্ডে একজন করে শেরপুর পৌরসভার ৯ ওয়ার্ডে ন্যূনতম ৪ জন কাজীর স্থলে তাদের কর্তৃত্ব চলে এক হাতেই। অবশ্য কাজী হযরত আলীর মৃত্যুজনিত সমস্যা দূরীকরণে গত ৮ জুন থেকে চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্টার কাজী মোঃ শফিকুল ইসলাম অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
এদিকে নানা তথ্য গোপন করে ২ সহোদর জুবায়ের ইবনে সালেহ ও আবুজার মোঃ আল আমিনের কাজীর লাইসেন্স প্রাপ্তির বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগের পরও কোন কাজ না হওয়ায় হাইকোর্টে দায়ের হয় পৃথক দু’টি রিট পিটিশন। পরবর্তীতে গত ৩১ জানুয়ারি ৭৪৪/১৭ রিট পিটিশনমূলে আবুজার মোঃ আল আমিন এবং গত ৮ মে ৬২৮৬/১৭ রিট পিটিশনমূলে জুবায়ের ইবনে সালেহ’র লাইসেন্স বাতিলের আদেশ হয়। আর সেই আদেশ মোতাবেক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব (বিচার শাখা) জিএম নাজমুছ শাহাদাতের গত ২ জুন সাক্ষরিত পত্রে জেলা রেজিস্টারকে উভয়ের নিকট থেকে বিবাহ রেজিস্ট্রিকরণ সম্পর্কিত যাবতীয় রেকর্ডপত্র ও বালামবহি জব্দকরণ এবং শূন্য ঘোষিত এলাকায় রেজিস্ট্রি সংক্রান্ত কার্য পরিচালনার জন্য স্ব-স্ব অধিক্ষেত্র সংলগ্ন কোন ওয়ার্ড/ইউনিয়নের নিকাহ রেজিস্টারকে অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সাথে সদর সাব-রেজিস্টারকে শূন্য ঘোষিত এলাকায় নিকাহ রেজিস্টার নিয়োগের জন্য বিধি মোতাবেক উপদেষ্টা কমিটির মাধ্যমে প্যানেল প্রস্তুত করতঃ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই নির্দেশের ৮ দিন পরও শূন্য পদ পূরণতো দূরে থাক, অধিক্ষেত্রের আশেপাশের কাউকে এখনও দেওয়া হয়নি কোন অতিরিক্ত দায়িত্ব।
উচ্চ আদালতে ২ রিটকারী আব্দুর রাকিব ও রাজু আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, সালাউদ্দিন কাজীর মৃত্যুর পর থেকে তার ২ পুত্র নানা জাল-জালিয়াতি ও তথ্য গোপনের মাধ্যমে পৃথক দু’টি লাইসেন্স হাসিল করে একটি বিশেষ অবস্থা গড়ে তুলেছিলেন। লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পর তারাই এখন নানা জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করে বিষয়টি ধামাচাপার চেষ্টা করছেন।
তবে লাইসেন্স বাতিল সম্পর্কে জুবায়ের ইবনে সালেহ’র সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব না হলেও কথা হয় তারই অনুজ আবুজার মোঃ আল আমিনের সাথে। তিনি বলেন, লাইসেন্স বাতিলের কোন আদেশ তাদের হাতে পৌঁছায়নি। এছাড়া তিনি দাবি করেন, শেরপুর পৌর এলাকায় নতুন করে কাজী নিয়োগ না করার বিষয়ে উচ্চ আদালতে তাদের তরফ থেকেও মামলা রয়েছে।
এ ব্যাপারে শেরপুরের জেলা রেজিস্টার সেলিম উদ্দিন তালুকদার বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক মন্ত্রণালয়ের দু’টি পৃথক চিঠি ৬ জুলাই রিটকারীদের হাতে হাতে পেয়েছি। পরে আইজিআর অফিসে যোগাযোগ করেও বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি। কিন্তু অফিসিয়াল কপি না পাওয়া পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। আদেশের অফিসিয়াল কপি পেলে অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নেব।