ময়মনসিংহ বন বিভাগের আওতায় শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড়ের বালিজুরি রেঞ্জের অধীনে চারটি বন বিট রয়েছে। বিটগুলো হচ্ছে বালিজুরি সদর, মালাকোচা, কর্ণঝোড়া ও ডুমুরতলা বিট। আড়াই যুগ আগে গারো পাহাড়ের এসকল বনে ছিল বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির ফলজ বৃক্ষ, ওষুধি গাছ আর শাল-গজারির সমারোহসহ নানা জাতের বৃক্ষ। ছিল বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও বন্য প্রাণির অভয়ারন্য। সর্বদাই পাখির কল কাকলিতে মুখরিত ছিল এ সকল বনাঞ্চল।। বনদস্যু কর্তৃক প্রাকৃতিক বন ধ্বংশ হওয়ার পর সরকার এখানে উডলট বাগান সৃজন করেছিল। এসকল উডলট বাগানের বৃক্ষ ছিল পরিবেশের জন্য হুমকি স্বরুপ। এর ফলে প্রকৃতি হয়ে ওঠে রুক্ষ ও বৈরী ভাবাপন্ন। পাহাড়ে বন্য প্রাণির খাদ্য না থাকায় বিলুপ্ত হয়েছে জীব বৈচিত্র। এছাড়া খাদ্যের অভাবে বন্য হাতির দল মাঝে মধ্যেই লোকালয়ে ঢুকে কৃষকের কষ্টের ফসল খেয়ে সাবার করে ফেলে।
এসকল বনে জীব বৈচিত্র ফিরিয়ে আনতে ও অনুকুল জল বায়ুর জন্য বন বিভাগের অধীনে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে সৃজন করা হচ্ছে টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) বাগান। বনে সুফল বাগান সৃজনে প্রকৃতি ফিরে পাবে পুর্বের অবস্থা। ফিরে আসবে জীব বৈচিত্র। বন্য প্রাণি ও পাখিদের কল কাকলিতে মুখরিত এসকল বনাঞ্চল। কর্মসংস্থান হবে খেটে খাওয়া হাজারো মানুষের।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের আওতায় বালিজুড়ি রেঞ্জের ৪টি বিটে ৫ শত হেক্টর জমিতে রোপণ করা হচ্ছে ৯ লক্ষ ৩৮ হাজার প্রাকৃতিক বৃক্ষ। এসকল বৃক্ষ হচ্ছে শাল, আমলকি, হরতকি, বহেড়া, অর্জুন, জারুল, সোনালু, গর্জন, চাপালিশ, নেওর, ডেওয়া, কানাইডিঙ্গা, জাম, লটকন, রক্ত চন্দন, বেল, জলপাই, তেতুল, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, নিম, কড়ই, হুছা ও মাকড়া ইত্যাদি।
এ অঞ্চলের সচেতন মহল মনে করছেন সুফল বাগান বাস্তবায়ন হলে এ অঞ্চলে বিলিন হয়ে যাওয়া জীব বৈচিত্র আবার ফিরে আসবে। আবারো প্রাণিকুল বনে ফিরে আসলে বনাঞ্চল ফিরে পাবে নিজস্ব স্বকিয়তা। ঘন সবুজের সমারোহে নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের লীলা ভূমি হবে এ অঞ্চল। এতেকরে এ অঞ্চলে ভ্রমন পিপাসু পর্যটকদের আনাগোনা বেড়ে যাবে। ফলে সরকারের কোষাগারে জমা হবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
বালিজুরি সদর বিট কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, সুফল বাগান বাস্তবায়ন হলে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটানোর জন্য প্রাকৃতিক বন সৃষ্টির ফলে প্রাণি কুলের আসাস্থল তৈরি হবে। প্রাকৃতিক বন সৃষ্টি হলে বনে জীব বৈচিত্র ফিরে আসবে। এতেকরে এ অঞ্চলের খেটে খাওয়া অবহেলিত মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এসকল লোকদের সমন্বয়ে পাড়ায় পাড়ায় ২৯ বা ৩০ সদস্য বিশিষ্ট বাগান কমিটি করা হবে এবং তাদের স্বাবলম্বি করার জন্য এনজিও’র মাধ্যমে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হবে। এর ফলে ছোট ছোট প্রকল্প যেমন হাঁস-মুরগী পালন করে স্বালম্বি হবে। তাছাড়া, সুফল বাগানের ফলে মাটির ক্ষয় রোধ হবে।