শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে ঐতিহাসিক কাটাখালি-রাঙ্গামাটিয়া যুদ্ধ দিবস পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে সোমবার (৬ জুলাই) সকালে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত শহীদ নাজমুল আহসান, তার সহযোদ্ধাসহ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে কাটাখালি সেতু অঙ্গণে নবনির্মিত শহীদ বেদীতে জেলা প্রশাসনের পক্ষে প্রথমে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তোফায়েল আহমেদ।
পরে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা কৃষক লীগ, উপজেলা জাসদ, উপজেলা ছাত্রলীগ, শেরপুর প্রেসক্লাব, জনউদ্যোগ শেরপুর, মুক্তিসংগ্রাম জাদুঘর শেরপুর সদর নেটওয়ার্ক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমরা ১৮ বছর’ শেরপুর ও ঝিনাইগাতী শাখা, পাবলিক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন শেরপুর জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ পুস্পস্তবক অপর্ণ করে। পুস্পস্তবক অর্পণকালে ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম, সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান লেবু, শেরপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের এনডিসি মিজানুর রহমান, সহকারী কমিশনার মাহমুদুল হাসান, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আব্দুল কাদির, ঝিনাইগাতী উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক একেএম ছামেদুল ইসলাম, জনউদ্যোগ আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, প্রেসক্লাব সভাপতি শরিফুর রহমান, ‘আমরা ১৮ বছর’ শেরপুরের আহবায়ক সাইফুল আলম শাহীন, ১৮ বছর সংগঠনের ঝিনাইগাতী শাখার আহŸায়ক তুষার আল নূর, শেরপুর ডিস্ট্রিক্ট ডিবেট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ চৌধুরী শৈবাল, আবির্ভাবের সদস্য সচিব হাসিব আল হাসান, পাবলিক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন শেরপুর জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়ক মাশুকুর রহমান ফাহিমসহ মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ওইসময় কাটাখালি-রাঙ্গামাটিয়া যুদ্ধের স্মৃতি ও চেতনা ভাস্বর করে রাখার লক্ষ্যে কাটাখালি ব্রিজ অঙ্গনে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করায় প্রশাসনকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আমরা ১৮ বছর’র ফেলো আবুল কালাম আজাদ। সেইসাথে কাটাখালি যুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় ব্রিজের পাশে একটি স্বাধীনতা উদ্যান প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানালে ওই বিষয়ে দ্রæত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তোফায়েল আহমেদ।
উলেখ্য, ১৯৭১ সালের ৫ জুলাই রাতে শেরপুর-ঝিনাইগাতী সড়কের কাটাখালি সেতুতে অপারেশন শেষে ৬ জুলাই ঝিনাইগাতীর রাঙ্গামাটিয়া গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এতে কোম্পানী কমান্ডার নাজমুল আহসান ও তাঁর পরিবারের ২ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন ও মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেনসহ ১২ জন শহীদ হন। ওই সময় হানাদার বাহিনী অর্ধ-শতাধিক ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয় এবং নিরীহ নারীদের ধর্ষণ করে। স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পরে হলেও গত বছর রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের ৩ নারীকে সরকার বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু শহীদ পরিবারগুলোর কোন স্বীকৃতি মেলেনি আজও। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ‘অপারেশন কাটাখালি’ ও ‘রাঙ্গামাটিয়া যুদ্ধ’ এক অনন্য স্থান দখল করে আছে। প্রতি বছর ৬ জুলাই ওই দিবসটি পালন করা হয়। স্বাধীনতা অর্জনের পর শহীদ নাজমুলের নামে ময়মনসিংহ কৃষি বিদ্যালয়ে একটি হল, নালিতাবাড়ীতে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আর মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৮ সালে শহীদ নাজমুলকে স্বাধীনতা পদক প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ‘অপারেশন কাটাখালি’ ও রাঙ্গামাটিয়া যুদ্ধের সরকারি স্বীকৃতি মিলেছে। এছাড়া স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন নৌ-পরিবহন সচিব ও নালিতাবাড়ীর কৃতি সন্তান আবদুস সামাদ ফারুকের সহযোগিতায় সেখানকার যুদ্ধের স্মৃতি ও চেতনা ভাস্বর করে রাখার জন্য পুরোনো সেই সেতুটি সংরক্ষণে সংস্কারকাজ করা হয়েছে। কাটাখালি ব্রিজ অঙ্গনে নির্মাণ করা হয়েছে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ। আর সেখানে স্বাধীনতা উদ্যান প্রতিষ্ঠা ও ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে।