সকল শিক্ষকদের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রেখে বন্ধুবর একজন শিক্ষককে নিয়ে আমার এই ক্ষুদ্র লেখা।
একজন টগবগে যুবক। যার চোখ জুড়ে স্বপ্ন দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করার। করেছেনও ঠিক তাই। কিন্তু মহামারি করোনা সেই মানুষটিকে বাধ্য করেছে চায়ের দোকান দিতে।
বলছি, হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি গ্রামের “লার্নিং পয়েন্ট একাডেমী”র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক বৃক্ষপ্রেমী, মানব দরদি এবং শিশুবন্ধু শেখ কায়সার আহমেদ ভাইয়ের কথা।
বাবা অসুস্থ থাকায় ৬ সদস্যের পরিবারের দেখভালের দায়িত্ব তার একারই। সেই দায়িত্ববোধ থেকে এবং আলোকিত সমাজ গড়তে তিনি বেছে নেন শিক্ষকতার মহান পেশা।এলাকায় গড়ে তোলেন “লার্নিং পয়েন্ট একাডেমী” নামের একটি কিন্ডারগার্টেন। ১৪ জন শিক্ষক ও দুই শতাধিক কঁচি-কাঁচা শিক্ষার্থীর পদচারণায় প্রাণবন্ত আর মুখরিত থাকত তার স্কুল।
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যা পেতেন তা থেকে শিক্ষকদের বেতন এবং প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় খরচ মেটানোর পর উদ্ধৃতাংশ দিয়ে কোনরকম চলতো তার ৬ সদস্যের পরিবার। ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সাত বছরে তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শতভাগ পাশসহ বিভিন্ন সফলতার মাইলফলক অতিক্রম করেছে।
হঠাৎ সুখের ঘরে, দুঃখের আগুন। করোনার ভয়াল থাবা কেড়ে নিলো তার এবং অন্য শিক্ষকদের সুখ। সরকারী নির্দেশনায় দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে বন্ধ হয়ে যায় তার প্রতিষ্ঠানটিও।
যেটুকু পুঁজি ছিলো তা দিয়ে শিক্ষদের বেতন, ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল দিয়ে তার এখন অনেকটা পথে বসার মতো অবস্থা। সমাজের চোখে শিক্ষক হওয়ায় অভাব অনটন আর দুঃখ কষ্টগুলো মনে চেপে রেখে ভদ্র বেশে পথ চললেও পরিবারের দুর্দশা ভাবিয়ে তোলে তাকে।
উপায়ান্তর না পেয়ে স্থানীয় বাজারে ছোট একটি চায়ের দোকান খুলে বসেন নিজের ও পরিবারের মুখে দুমুঠো খাবার জোগাড়ের আশায়।
শিক্ষক কায়সার জীবিকার তাগিদে বসে থাকেন চায়ের দোকানে। কিন্তু তার মন পরে থাকে স্কুলে। চোখ থাকে চায়ের কাপে ঠিকই কিন্তু অন্তর দৃষ্টি তার ছোট্ট সোনামনিদের দিকে। তিনি প্রহর গুনতে থাকেন আবার কবে মুখরিত হবে তার প্রতিষ্ঠান। আবার কবে শুনতে পাবেন শিশুদের হৈ চৈ। কবে তিনি হাতে তুলে নিবেন চক-ডাষ্টার। শিক্ষার্থীদের বলবেন, কেমন আছো তোমরা? আজ পড়া শিখে এসেছো? কাল এগুলো পড়ে আসবে কিন্তু।
নিয়মমাফিক যিনি রোজ সকালে বের হতেন শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে। আজও তিনি বের হন ঠিকই। কিন্তু স্কুলের উদ্দেশ্যে নয়। জীবন ও জীবিকার তাগিদে চা বিক্রি করতে। যিনি স্কুলে গিয়েই ছাত্রদের বলতেন, কেমন আছো তোমরা? আজ তিনিই বাজারে গিয়ে বলেন- ভাই, রং চা নাকি দুধ চা?
করোনার নির্মমতায় শুধু শেখ কায়সার আহমেদই নয়। সারাদেশে এমন অসংখ্য কিন্ডারগার্টেন এর শিক্ষক বেছে নিয়েছেন নানান পেশা। যা হয়তো আমাদের অনেকেরই অজানা। তবে তারা এখনো তাকিয়ে আছে সরকারের প্রণোদনার আশায়।
তাই বলছি করোনা তুমি চলে যাও। তুমি গেলেই শিক্ষার্থীদের আগমনে আবার প্রাণবন্ত হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকগণ ফিরে যেতে পারবেন তাদের সম্মানিত পেশায়।