:এম. সুরুজ্জামান/ জাহিদুল হক মনির:
শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে গবাদিপশুর মাঝে লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) চর্মরোগ নামের এক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত এক মাস ধরে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে এই ভাইরাসে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা ক্রমে বেড়ে চলেছে। এর আগে এমন রোগের দেখা না পাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা গবাদিপশু নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। কৃষকদের ভাষ্য মতে, এ পর্যন্ত এ উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার গরু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ সময় গরুর খাওয়া নিয়মিত ও স্বাভাবিক থাকে না বলে কৃষকদের পড়তে হচ্ছে বিপাকে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের ঝিনাইগাতী গ্রামের কৃষক কফিল উদ্দিন জানান, এই রোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে গরুর শরীরের বিভিন্ন স্থান ফুলে গুটি হয়ে ওঠে। এর সঙ্গে গরুর শরীরের তাপমাত্রা (জ্বর) বেড়ে যায়। এতে আক্রান্ত গরুগুলো নিস্তেজ হয়ে পড়ে। দু-তিন দিনের মধ্যে গুটিগুলো ফেটে কষ (রস) ঝরে। একপর্যায়ে ক্ষতগুলো পচে গরুর শরীর থেকে মাংস খসে পড়ে। এ সময় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্যমতে, এই ভাইরাসটি লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডি) নামে পরিচিত এটি একটি মশা ও মাছি বাহিত চর্মরোগ রোগ।এ রোগটি মারাত্মক ছোঁয়াচে। এ রোগ দ্রুত সময়ের মধ্যে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। গত এক মাসে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর থেকে এই রোগের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে অন্তত ২৮৮টি গরুকে।
উপজেলার রাংটিয়া গ্রামের কৃষক আমির হোসেনের বাড়ির আঙিনায় একটি গাভীর শরীরের বিভিন্ন স্থান ফুলে গুটি হয়ে ওঠেছে। কয়েকদিন আগে গাভীর শরীর থেকে ক্ষত হয়ে মাংস খসে পড়েছে। সেখান থেকে ঝরে পড়ছে কষ। এই ক্ষতস্থান থেকে দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে। তিনি বলেন, তার ছোট বড় তিনটি গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত গরুগুলোর চিকিৎসায় তার ব্যয় হয়েছে তিন হাজার টাকা। নলকুড়া ইউনিয়নের পল্লি পশু চিকিৎসক মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, পল্লি পশু চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছেন প্রায় ২১ বছর ধরে। এর মধ্যে আগে কখনো এমন রোগ দেখা পাননি। এ রোগে আক্রান্ত গরুগুলোর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, ক্ষতস্থান শুকানো, গরুর শরীরের চামড়া চর্মরোগ থেকে রক্ষায় তিনি অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিহিস্টামিন–জাতীয় ইনজেকশন দিচ্ছেন। এতে গরুর ক্ষতস্থান সেরে উঠছে। এদিকে, পাশের উপজেলা নালিতাবাড়ীতও এ পশুরোগ ছড়িয়ে পড়েছে বলে অনেক কৃষক জানিয়েছেন।
ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. এটিএম ফায়জুর রাজ্জাক আকন্দ বলেন, এ উপজেলায় গরুর শরীরে এই ভাইরাসটি দেখা দিয়েছে। অথচ এখনো এর কোনো প্রতিষেধক বের হয়নি। এই ভাইরাস নিয়ে কৃষকের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। মশা ও মাছির মাধ্যমে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। তবে উপজেলায় কোনো গরু মারা যাওয়ার সংবাদ তারা এখনো পাননি। তিনি আরও বলেন, দপ্তরের হিসাব মতে উপজেলায় খামার এবং কৃষক পর্যায়ে গরুর সংখ্যা প্রায় ৫৫ হাজার, এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার গরুর শরীরে রোগ দেখা দিয়েছে। এছাড়া ৭ হাজার ৬০০ গরুকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিসহ কৃষকদের সঙ্গে বৈঠক করে এ ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। কৃষকদের গোয়ালঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার উপদেশ দিয়েছেন তিনি।