মসজিদের শহর বাগেরহাট নিয়ে গবেষণা, অনুসন্ধান, বিশ্লেষণ কম হয়নি। তবুও প্রতিনিয়ত তৈরি হয় নতুন গল্প, মেলে নতুন সব তথ্য। উপমহাদেশের বিখ্যাত ইসলাম প্রচারক খান জাহান আলী নির্মিত ‘ষাটগম্বুজ মসজিদ’ এর গম্বুজ কয়টি তা নিয়েও মানুষের আগ্রহের শেষ নেই। লাল পোড়া ইটের ওপর নয়নাভিরাম কারুকার্য খচিত বহুগম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটির ইটের দেয়ালে ভেতর এবং বাইরের অংশে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন টেরাকোটা।
তুঘলক স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যে বাংলাদেশে যে কয়টি মসজিদ রয়েছে তার মধ্যে ষাটগম্বুজ মসজিদ অন্যতম। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে চমৎকার মসজিদ স্থাপত্য নিদর্শন এই ষাটগম্বুজ মসজিদ। জনশ্রুতি রয়েছে মসজিদ নির্মাণের সময় চুন-সুড়কির সঙ্গে মধু ব্যবহার করা হয়েছে। ১৬৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০৮ ফুট প্রস্থের মসজিদের দেয়ালগুলো আট ফুট করে পুরু। এতে গোলাকার গম্বুজ রয়েছে ৭০টি, চারচালা বিশিষ্ট গম্বুজ রয়েছে সাতটি এবং কর্ণার বুরুজ রয়েছে চারটি। সব মিলে মোট ৮১টি গম্বুজ রয়েছে ষাটগম্বুজ মসজিদে।
পঞ্চদশ শতাব্দীতে নির্মিত ষাটগম্বুজ মসজিদের নামকরণ নিয়ে মূলত তিনটি জনশ্রুতি রয়েছে- ছাদগম্বুজ থেকে ষাটগম্বুজ, ষাটখাম্বুজ (৬০টি পিলার) থেকে ষাটগম্বুজ এবং কারো কারো মতে ফারসি শব্দ সোয়াস্তু খাম্বুজ থেকে ষাটগম্বুজ মসজিদ। তবে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ মনে করে, অর্ধ ডিম্বাকার এবং আয়তাকার গম্বুজগুলোই ছাদ। এজন্য এই মসজিদকে ‘ছাদগম্বুজ’ মসজিদ বলা হতো।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর তাদের কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে নিয়মিত সংরক্ষণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেসকো ষাটগম্বুজ মসজিদসহ খানজাহানের স্থাপত্যগুলো তালিকাভুক্ত করে। ১৪৫৯ সালের পূর্বে কোনো এক সময় ঐতিহাসিক এই মসজিদ নির্মাণ করেছেন বলে শিলাতে লিপিবদ্ধ আছে।
মার্কিন ব্যবসা-সংক্রান্ত ম্যাগাজিন ফোর্বসের দৃষ্টিতে বিশ্বের ১৫ হারানো শহরের তালিকায় বাগেরহাট অন্যতম। এতে উল্লেখ করা হয়, ‘১৪৫৯ সালে খান জাহানের মৃত্যুর পর বাগেরহাট পরিণত হয় জঙ্গলে। শতাব্দী পর এটি আবিষ্কৃত হয়েছে।’ এছাড়া চীনা গণমাধ্যম সিজিটিএন ‘নো এশিয়া বেটার’ সিরিজের অংশ হিসেবে এ বছরের জুনে বাগেরহাট নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বলা হয়েছে, ‘বাগেরহাটের মসজিদগুলো প্রাচীনকালে বাংলার মুসলিম স্থাপত্যের পরিচয় বহন করে। পঞ্চদশ শতকে ইসলাম ধর্মের প্রচারক উলুঘ খান জাহান শহরটি গড়ে তোলেন। এর আগে খলিফতাবাদ নামে পরিচিত ছিল এটি। এখানে মধ্যযুগীয় ইসলামি শহরের সব বৈশিষ্ট্য সংরক্ষিত আছে।’
থাকা-খাওয়া
ঢাকার সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১০টা এবং সন্ধা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বেশ কিছু বাস ছেড়ে যায়। গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকেও গাড়ি ছাড়ে। এই বাসগুলোতে জনপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ভাড়া লাগে। এছাড়া ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসে খুলনা এসে সেখান থেকে বাসে বা সিএনজিতে করে বাগেরহাট যেতে পারবেন।
বাগেরহাটে থাকার জন্য তেমন ভাল ব্যবস্থা নেই। তবে মাঝারি মানের কিছু আবাসিক হোটেল আছে। রেল রোডে মমতাজ হোটেলে সুযোগ সুবিধা কম থাকলেও সেবার মান তুলনামূলক ভাল, তবে খরচ একটু বেশি। এছাড়া বাগেরহাট সদরে সরকারি গেস্ট হাউজ, হোটেল অভি (০১৮৩৩৭৪২৬২৩), হোটেল আল আমিন (০৪৬৮-৬৩১৬৮, ০১৭১৮৬৯২৭৩৭) এবং হোটেল মোহনায় (০৪৬৮-৬৩০৭৫, ০১৭২২৮৫৮৩১৩) রাত্রি যাপন করতে পারেন। তবে খুলনা থেকে বাগেরহাট বাসে যেতে মাত্র ১ ঘণ্টা সময় লাগে; তাই খুলনায়ও থাকতে পারেন।