শেরপুরের শ্রীবরদীতে দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে ৯ হাজার টাকা দিয়ে ৩/৪ বছরেও মিলে নাই পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ। ঘরে টাকা না থাকায় অন্যের কাছ থেকে ঋণ করে পর্যায়ক্রমে ৯ হাজার টাকা দালালচক্রের স্থানীয় সদস্য দুলাল মাস্টার ও নুর জামালের হাতে তুলে দিয়েছেন শ্রীবরদীর সীমান্তবর্তী চান্দাপাড়া গ্রামের এক বিধবা মহিলা। এতে করেও নামমাত্র খরচের বিদ্যুৎ সংযোগ হাজার হাজার টাকা দিয়েও না পেয়ে চরম হতাশায় ভোগছেন ওই মহিলাসহ সীমান্তের হাতিকবলিত এলাকার আরো আড়াই শত পরিবার। অন্যদিকে বিদ্যুত সংযোগের প্রলোভন দেখিয়ে দালালচক্র হাতিয়ে নেয়েছে ওইসব এলাকা থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা।
সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগি পরিবার জানায় , উপজেলার সিংগাবরুনা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী হারিয়াকোনা, বাবেলাকোনা, মণিকোনা ও চান্দাপাড়া গ্রামে ১ শত ৫০টি খুঁটির বিপরীতে প্রায় ২ শত ৫০ জন গ্রাহকের মাঝে পল্লী বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে। বিদ্যুৎ সংযোগকে কেন্দ্র করে ঠিকাদারদের তৈরী একটি সংঘবদ্ধ দালালচক্র গ্রামের সাধারন মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা।
এদের মধ্যে বাবেলাকোনা আদিবাসী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক দুলাল মিয়া, মেঘাদল বাজারের মুদি দোকানী নুর জামাল, ইউপি সদস্য আফুজল হক ওস্তাদ, হারিয়াকোনা গ্রামের মিঠুনসহ ৮/১০ জনের একটি সংঘবদ্ধ দালালচক্র। এরা দীর্ঘদিন যাবত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নাম করে গ্রামের নিরীহ লোকজনের কাছ থেকে ধাপে ধাপে ৭ হাজার ২ শত টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছে। এতেকরে গ্রামের লোকজনের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
চান্দাপাড়া গ্রামের মিজানুর রহমান, আক্তার হোসেন, নুরজামাল ও জহুরা খাতুনসহ হারিয়াকোনা, বাবেলাকোনা ও চান্দাপাড়া গ্রামের অনেকেই জানান, দুলাল মাস্টার, নুর জামাল ও ওস্তাদ মেম্বারসহ একটি দালালচক্র আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার কথা বলে এ এলাকা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এনিয়ে ইউপি সদস্য আফুজল হক ওস্তাদ বলেন, দুলাল মাস্টার ও নুর জামাল বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার প্রতি ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার ২ শত টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। দুলাল মাস্টার ও নুর জামালের সাথে কথা হলে তারা বলেন, পল্লী বিদ্যুতের ইলেক্টিশিয়ান আলমগীর ও ঠিকাদার জয়নাল বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। আমরা এলাকাবাসির সুবিধার্তে ঠিকাদারের লেবারদের খাবারের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য টাকা উঠিয়েছি।
এব্যাপারে ঠিকাদার জয়নাল টাকা নেয়ার কথা অস্বিকার করে মোবাইলে ফোনে বলেন, আমাদের নাম ভাংগিয়ে কেউ টাকা নিলে আমাদের কিছু করার নাই । আমি কোন বাড়তি টাকা পয়সা নেয়নি । হরহামেশায় বাড়তি টাকা নিচ্ছেন এমন তথ্য-প্রমাণ সাংবাদিকদের কাছে আছে জানালে তিনি ফোন কেটে দেন।
এদিকে ভুক্তভোগিদের তথ্যমতে, দালালচক্রের মূলহোতা ও ঠিকাদারের লোক বলে পরিচিত ইলেক্টিশিয়ান আলমগীর এব্যাপারে টাকা নেয়ার কথা অস্বিকার করে পরে দেখা করবেন বলে ফোন কেটে দেন । পরে অনেক যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শ্রীবরদী শাখার সাব-ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রাশিদ জানান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিনা খরচে বিদ্যুৎ লাইনের যাবতীয় সরঞ্জাম সরবরাহ করে থাকে। প্রতি গ্রাহহের নিকট শুধু মাত্র ৪৫০ টাকা জামানত হিসাবে গ্রহণ করে থাকে। বাড়তি টাকা নেওয়ার কোন প্রকার সুযোগ নাই। এলাকার কেউ যদি অতিরিক্ত টাকা দিয়ে থাকে তবে তারা দালালদের খপ্পরে পরে এ কাজ করেছে।
শেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার(জিএম) মোঃ মাশরুল হক খান বলেন, লাইন নির্মাণ প্রকৌশল বিভাগের কাজ,আর আমরা শুধু লাইন নির্মাণ শেষ হয়ে গেলে সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়। ওই এলাকা থেকে আমাদের অফিসে কোন প্রকার টাকা জমা দেওয়া হয় নাই। অফিসে ৪৫০ টাকা জামানত দিলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।
এব্যাপারে শেরপুর-জামালপুরের পল্লী বিদ্যুৎ নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ আহাম্মেদ মুঠোফোনে জানান, আমাদের এব্যাপারে কেউ কোন অভিযোগ করেনি। আমরা স্থানীয়দের মাইকিং ও বিভিন্নভাবে প্রচার করে সচেতন করার চেস্টা করছি। তবে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।