দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের মাঝে আলো ছড়াচ্ছেন তারা। বিনিময়ে পাননি কোনো পারিশ্রমিক। বেতন নেই বলে পাঠদানে কখনো তাদের অনীহা দেখেনি শিক্ষার্থীরা। তবে অন্যের জীবনে আলো ছড়ালেও শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মরিয়মনগর উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষকরা পড়ে আছেন অন্ধকারেই! সংসারের হাল ধরতে ওই প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। ভেবেছিলেন একদিন সুখের মুখ দেখবেন। কিন্তু চাকরি জীবনের বেশিরভাগ সময় অতিক্রান্ত হলেও সুখপাখির দেখা মেলেনি। নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর মতোই ছড়িয়ে গেছেন জ্ঞানের আলো। এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সরকারি কোষাগার থেকে বেতন-ভাতা না পেয়ে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৯ সালে ঝিনাইগাতী উপজেলার মরিয়মনগর এলাকায় বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থী ৪০৫, শিক্ষক ১৫ এবং কর্মচারী ৪জন। প্রায় দুই একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়ে একটি তিনতলা ও একটি টিনশেড ভবন আছে। ভবনগুলোতে আসবাবপত্রও আছে পর্যাপ্ত। আছে দিগন্তজোড়া মাঠ, খোলামেলা পরিবেশ, সমৃদ্ধ পাঠাগার, বিজ্ঞানাগার। প্রধান শিক্ষকের দক্ষতা ও একদল নিষ্ঠাবান শিক্ষকের কারণে শিক্ষার্থীরাও জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করছে। এ রকম সব ধরনের শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ৫০ বছর পরও বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়নি।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের (এসএমসি) সভাপতি ও মরিয়মনগর খ্রিশ্চিয়ান মিশনের ফাদার সুবল খুজুর বলেন, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষার্থীদের পাঠদানসহ শিক্ষার গুণগত মান বজায় রেখেছে। শিক্ষার্থীরাও পাবলিক পরীক্ষায় ভালো ফল করছে। তথাপি প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় এর শিক্ষক-কর্মচারীরা আর্থিক-সংকটে দিন কাটাচ্ছেন।
প্রধান শিক্ষক অঞ্জন আরেং বলেন, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে সাংসদসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এটি এমপিওভুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। এমপিওভুক্ত না হওয়ায় বিদ্যালয়ে দীর্ঘ কর্মজীবন শেষে অনেক শিক্ষক শূন্য হাতে অবসরে গেছেন।উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তফা কামাল বলেন, বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হওয়ার যোগ্য একটি প্রতিষ্ঠান। এই এলাকার ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া ও শিক্ষার মানোন্নয়নে অর্ধশত বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তাই সার্বিক বিচারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এটি এমপিওভুক্ত হওয়া উচিত।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ বলেন, মরিয়মনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীগণ আবেদন করলে সুপারিশসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরণ করবেন বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেরপুর-৩ (ঝিনাইগাতী-শ্রীবরদী) আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী আলহাজ্ব এ কে এম ফজলুল হক বলেন, ২০১০ সালের পর বর্তমান সরকারের আমলে কোনো মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি। এবার নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত করণে শিক্ষা মন্ত্রালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। আশা করছি, এবার এমপিওভুক্তের আওতায় এ প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হবে।