শেরপুরের শ্রীবরদী সীমান্তে পাহাড়ি জনপদে জনপ্রিয় হচ্ছে ‘কাসাভা’ চাষ। স্থানীয়ভাবে “শিমলা আলু” নামে পরিচিত ‘কাসাভা’। আবাদে অনেকটাই খরচ কম। পরিত্যক্ত জমি এবং পাহাড়ের ঢালে এ আবাদ করা হচ্ছে। তাছাড়া বাজারে এর চাহিদাও বেশ ভালো। আলু জাতীয় গোত্রের কাসাভা খাবার ও পুষ্টির চাহিদাও মেটায়। এতে প্রচুর শর্করা রয়েছে। ফলে পাহাড়ের আদিবাসীরা দিন দিন কাসাভা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। শুধু শেরপুরই নয় জেলার ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ীতেও কাসাভা চাষ হচ্ছে।
জানা যায়, কাসাভা বছরের যে কোন সময় রোপন করা যায়। তবে সাধারণত বর্ষার শুরুতে কাসাভার কাটিং লাগানো ভালো। আমাদের দেশে এপ্রিল থেকে মে মাস কাসাভা লাগানোর সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এতে তেমন কোনো সার প্রয়োগ করতে হয় না। তবে বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য হেক্টরপ্রতি ১৮০-২০০ কেজি নাইট্রোজেন, ১৫-২২ কেজি ফসফরাস ও ১৪০-১৬০ কেজি পটাসিয়াম প্রয়োগ করলে সর্বাধিক ফলন পাওয়া যায়। কাসাভা চাষে সাধারণত সেচের প্রয়োজন হয় না। দীর্ঘদিন খরা অবস্থা বিরাজ করলে হালকা সেচের ব্যবস্থা করা হলে ফলন বৃদ্ধি পায়। চারা গজানোর পর ৩মাস অন্তর গোড়ার আগাছা পরিষ্কার করে গোড়ায় মাটি তুলে দিলে ফলন ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। এছাড়া জেলার ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তে কাসাভা চাষ হচ্ছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় শ্রীবরদী উপজেলার কর্নঝোড়া গ্রামের কৃষকদের সাথে। তারা এ প্রতিবেদককে জানান, প্রতি একর জমিতে কাসাভা রোপন করতে এবং উত্তোলন করতে কৃষকের শ্রমিক খরচ হয় প্রায় ৬ হাজার টাকা। প্রতি একর জমিতে কাসাভা আলুর ফলন পাওয়া যায় ১৫০ থেকে ২০০ মণ। বাজারে প্রতিমণ কাসাভা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা মণ দরে। আর পাইকাররা ক্ষেত থেকে ৫৫০ টাকা মণ দরে কিনে আনছে। পরে তারা ১৫ টাকা কেজি দরে কিনে, শেরপুরের বাজারে ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে এবং ঢাকাসহ অন্য জেলার বাজারে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছে। এ হিসাবে কৃষক আয় করছে প্রতি একরে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। এসব শিমলা আলু বা কাসাভা কাঁচা খাওয়া যায় এবং সবজি হিসেবে রান্না করেও খাওয়া যায়। এগুলো খুবই পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু। বাজারে এর খুবই চাহিদা। অল্প খরচে কাসাভা চাষ ব্যাপক জনপ্রিয় হচ্ছে।
সিংগাবরুনা ইউনিয়নের কৃষক সাঈদ মিয়া, রিপন হোসেন, আসকর আলীসহ অনেকে জানান, ‘শিমলা আলু চাষ করতে খরচ কম হয়। তাই আমরা এ আবাদ করি। আর যা টাকা পাই তাই দিয়ে আমাদের সংসার চলে।’
খ্রিস্টানপাড়া গ্রামের কৃষক লবকোশ মারাক, দ্রতিন সাংমাসহ অনেকে জানান, ‘কাসাভা খাবারের পাশপাশি বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি’র, গু-ক্লোজ, চিপস এবং বার্লির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।’
খ্রিস্টানপাড়া আদিবাসী নেত্রী রেনেটা মারাক বলেন, ‘সীমান্ত এলাকার পাহাড় ও টিলা এবং শুষ্ক অঞ্চল যেখানে অন্য কোনো ফসল করা যায় না বা পরিত্যাক্ত জমিতে সেখানে কাসাভার চাষ সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। ফসল বহুমুখীকরণ, মঙ্গা মোকাবেলা এবং পতিত জমিগুলো ফসল চাষের আওতায় নিয়ে আসার জন্য কাসাভা একটি লাগসই ফসল।’
শ্রীবরদীর আদিবাসী সংগঠন উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা বলেন, ‘আদিবাসীরা কাসাভা চাষে ব্যাপক আগ্রহী হয়ে উঠছেন। সরকারি বা বেসরকারি ভাবে কাসাভা ক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহন করা হলে আরো ব্যাপক আকারে চাষ হবে। পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা এবং হত দরিদ্র কৃষকদের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে।’
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাজমূল হক জানান, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাসাভার কোন বিকল্প নেই। আগে এর চাহিদা কম থাকলেও বর্তমানে এর চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে পাহাড়ি এলাকায় কাসাভা আবাদ বেশি হচ্ছে।