চামড়ার বাজারে ধস। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের প্রতিবছর এ সময় আয় করতে দেখা গেলেও কিন্তু এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। চামড়ার দাম পেয়ে যাদের উপকৃত হওয়ার কথা তারা এবার তা পাচ্ছেন না। বলা যায় পুরো লাভটাই যাচ্ছে আড়তদার, ব্যবসায়ী আর ট্যানারি মালিকদের পকেটে।
এমতাবস্থায় সরকার বাধ্য হয়েই চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বুধবার (১৪ আগস্ট) সকালে রংপুরে নিজ বাসভবনে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। রপ্তানি শুরু হলেই বাজারে চামড়ার দাম বাড়বে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
টিপু মুনশি বলেন, আমরা রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যদি রপ্তানি করা যায় তাহলে দাম বাড়বে। যারা এর মধ্যে বিক্রি করে দিয়েছে তাদের আসলেই লোকসান হয়েছে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসব। আমরা বলেছিলাম চামড়াটা লবণ দিয়ে অন্তত দুই চারদিন রেখে দেয়। যদি চামড়া রপ্তানি করা যায় তাতে তৃণমূলে চামড়ার দাম ভাল হবে।
এদিকে ট্যানারি মালিকদের দাবি, আড়তদারেরা নিজেরা সিন্ডিকেট করে চামড়ার দাম কমিয়ে দিয়েছে। এতে তারাই লাভবান হবেন। আর আড়তদারদের অভিযোগ ট্যানারি মালিকেরা গতবারের চামড়ার দাম পরিশোধ না করায় এবার বেশির ভাগ আড়তদার বা ব্যবসায়ী চামড়া কেনা থেকে বিরত থেকেছেন। ফলে চামড়ার দাম কমে গেছে।
এ বছর ঈদে কোরবানির জন্য পশুর চাহিদা ছিল প্রায় এক কোটি ১০ লাখের মতো। এ জন্য প্রায় ৪২ লাখ গরু প্রস্তুত ছিল। বাকিটা ছাগল ও মহিষ কোরবানি হয়েছে। অর্থনীতিবিদ ও বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চামড়ার বাজারে ধস নামার কারণে দরিদ্র জনগোষ্ঠী কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা সহায়তা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অন্যদিকে কম দামে চামড়া কিনতে পারায় এবং এখন কাঁচা চামড়া বিদেশে রপ্তানির অনুমতি মেলায় ৫০০ কোটি টাকার বেশি অতিরিক্ত লাভ হাতিয়ে নেবে আড়তদার, ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকেরা। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন লাভ যাবে আড়তদার ও ব্যবসায়ীদেরই পকেটে। চামড়া রপ্তানি হলে ট্যানারি মালিকেরা তখন আর কম দামে এদের কাছ থেকে চামড়া কিনতে পারবেন না।
সোমবার থেকে দেশের চামড়ার বাজারে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা গেছে। লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে মাত্র তিন শ টাকায়। যাঁরা কোরবানি দিয়েছেন, তাঁরা যেমন চামড়ার দাম পাননি, তেমনি দাম পাচ্ছেন না মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেছেন, সিন্ডিকেটের কারণেই বাজারের এ অবস্থা।
গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার চামড়ার অস্থায়ী বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি ছোট চামড়ার দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, মাঝারি আকারের প্রতিটি চামড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং বড় চামড়া ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই দাম গত বছরের তুলনায় অর্ধেক।