শেরপুরের নালিতাবাড়ীর পাকা ধানের ক্ষেত থেকে বন্যার পানি কমে গেলেও কৃষিশ্রমিক সংকটে দুশ্চিন্তা কমছে না কৃষকের। কৃষিশ্রমিকের অভাব ও উচ্চ মূল্য চাওয়ায় সেই ফসল ঘরে তুলতে পারছেন না কৃষক।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২২ এপ্রিল পাহাড়ি ঢলে পানি মালিঝি ও চেল্লাখালী নদীর দিয়ে উপজেলার কলসপাড়া ইউনিয়নের উত্তর, দক্ষিণ, মধ্য নাকশি গ্রামের আয়লি, বোয়ালমারি,চিনামারা, দিগাইর, গড়াডুবি, চতল, বল্লি, দুবলাছুড়ি বিলের ৭০০ একর ও গাগলাজানি গ্রামের টাকিমারী, নয়ানি, চোয়া, ফেসকি, শালচুড়া, নিলজা ও নগর পাড়া বিলের প্রায় ৫০০ একর এবং ২৩ এপ্রিল বাঘবেড় ইউনিয়নের উত্তর সন্নাসীভিটা এলাকায় চেল্লাখালী নদীর বাঁধের ভাঙন অংশ দিয়ে পানি ঢুকে যোগানিয়া ইউনিয়নের কাপাসিয়া, আড়িয়াল, বাটকামারী, দক্ষিণ বাটকামারী, যোগানিয়া, কুত্তামারা, বাথুরকান্দা, গড়াকুড়া বিলের ৫০০ একর ফসল ডুবে যায়।
এই সব ফসল ৮ থেকে ১০ দিন পানির নিচে ছিলো। বর্তমানে নদীতে ঢলের পানি কমে যাওয়ায় ও কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি না থাকায় এই সব বিলের অধিকাংশ জমি থেকে পানি নেমে গেছে। জেগে থাকা ফসল কাটতে কৃষকরা শ্রমিকের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন। কিন্তু দিনমুজুরী হিসেবে বেশি টাকা চাওয়ায় এবং কৃষিশ্রমিকের সংকট থাকায় ফসল কাটতে পারছে না কৃষক। আবারও পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টি আশঙ্কায় ফসল নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
মধ্য নাকশি গ্রামের কৃষক আফসর আলী (৪৫) বলেন, কিছু শ্রমিক পাওয়া গেলে তারা কৃষকদের উল্টো নানা শর্ত জুড়ে দেয়। তারপরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধান কেটে শ্রমিকরা ক্ষেতেই রেখে দিচ্ছে। ওখান থেকে আলাদা শ্রমিক দিয়ে বাড়িতে কাটা ধান এনে মাড়াই করতে হচ্ছে। আর বম মেশিন দিয়ে মাড়াই করতে প্রতি একরে লাগছে ১৫-১৬শ’ টাকা।
কাপাসিয়া গ্রামের গৃহিনী রোকেয়া বেগম (৫৫) বলেন, তিন দিন ধইরা ফসল জাগছে। ধান কাটতে একজন কামলা দিনে ৯০০ টেহা আর দুই বেলা খাওয়ন দিয়ুন লাগে। তাও কামলা পাওয়া যায় না। ক্ষেত লইয়া আমরা বড় বিপদে আছি।
যোগানিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, অধিকাংশ জমি থেকে পানি নেমে গেছে। কিন্ত কৃষিশ্রমিকের মুজুরী বেশি হওয়ায় অনেকেই ফসল কাটতে পারছে না। এতে কৃষকরা নতুন করে ক্ষতির শিকার হবেন।
উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা মো.শরিফ ইকবাল বলেন, উপজেলায় কৃষকদের ক্ষয়-ক্ষতির তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ডুবে থাকা ক্ষেত থেকে অনেকেই ফসল কাটছেন। তবে তুলনামূলকভাবে সেখানে কৃষকরা ফলন কম পাচ্ছেন। কৃষিশ্রমিকের সংকট তেমন নেই তবে নিন্মাঞ্চল হওয়ায় ধান কাটতে মুজুরী হিসেবে তারা বেশি টাকা দাবী করছেন।