“ভাই ঈদ দিয়ে কি করমু, ঈদেও যেমন; ঈদ না থাকলেও তেমন। মনে করছিলাম এবার ঈদে কিছু টাকা জমিয়ে বাড়ির ঘরের জন্য টিন কিনবো, কিন্তু টিনতো দূরের কথা চাউল কিনাই এখন বড় দায় হয়ে গেছে” নিচুঁ হয়ে শেরপুর টাইমস্ এর প্রতিবেদক শাকিল মুরাদকে এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন নিউ মার্কেটে ভ্রাম্যমান মুচি সুমন কৃষ্ণা (২৩)। ঢাকলহাটি মহল্লার ব্রমান কৃষ্ণার ছেলে সুমন কৃষ্ণা।
কৃষ্ণা বলেন, ছোট থেকেই এক বেলা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে জুতা-সেন্ডেল ও কালি করে টাকা অর্জন করেছি। আবার আরেক বেলা পড়ার দিকে মনযোগ দিয়েছি। দরিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে ৮ম পাশ করেছি। অনেকের যেমন শিক্ষা জীবনের পথকে থামিয়ে দেয়। আমার ঠিক এমনটাই হয়েছে। শিক্ষার আলো থেকে অভাবের তাড়নায় এখন আমি দূরে। এখন কর্ম আমার মুচি। আর দশ জন মুচির ছেলে শিক্ষিত হয়ে সমাজের মুখ উজ্জল করেছে। আমারও ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু দরিদ্রতার জন্য পিছিয়ে পড়েছি। এসব কথা বলতে গিয়ে তিনি নিজেই লজ্জায় মুখ নিচুঁ করে ছিলেন বলে তিনি জানান। এমন সুমন কৃষ্ণার মতো আরো অনেকেই আছে যারা এখন দরিদ্রতার কারণে শিক্ষার আলো থেকে দূরে।
শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, একসঙ্গে ২-৩ দোকান। কেউ কাজ করছে, কেউবা আবার বসে আছে। জুতা সেন্ডেল ও কালি করাই এদের কাজ। একটা জুতা পূরোটা সেলাই করলে পায় ৪০টাকা। সেন্ডেল সেলাই করলে পায় ৩০টাকা। জুতা কালি করলে দেয় ৩০থেকে ৬০টাকা। সারাদিন কমবেশি এভাবেই কাজ করে মুচিরা। টাউন হল মার্কেটের সামনে সুন্তুস চন্দ্র ঋষি বলেন, ঈদে তেমন আমাদের কাজ নেই। কোন মত চলছে আরকি। ঈদে এবার আমাদের কাজ কম। তবে কোরবানীর ঈদে আমাদের কাজের চাপ বেশি থাকে। ফলে ৫শ থেকে ৮শ টাকা পর্যন্ত পকেটে আসে।
শহরের নিউ মার্কেট এলাকার মুচি মুকুল ঋষি বলেন, ঈদের জন্য সকাল ৮টায় দোকান খুলি ১০টায় বন্ধ করি। সারাদিন কাজের পর পকেটে আসে ৩শ থেকে ৪শ টাকা। আবার ঈদ ছাড়া ২শ থেকে ৩শ টাকা। খরমপুর এলাকায় মুচি সুমন ক্লান্তি বলেন, যে দিন ভাল আয় হয় সেদিন খাওয়া জুটে, আর না হলে অনেক সময় এক বেলা খেতে হয়।