দলের প্রাণশক্তি এরশাদের অবর্তমানে দলীয় সংহতি অটুট রাখতে অধিকাংশ নেতারা এক কাতারে। তাদের দাবি, দলে আর কোনো সংকট নয়, ভাঙন নয়, বরং আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে দল। দলকে সম্মানজনক অবস্থানে রাখতে মান-অভিমান ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকবেন তারা। এরই মধ্যে ভেতরে ভেতরে আলাপ-আলোচনা চলছে।
এরশাদের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরের আন্তরিকতায় জাপা আরও শক্তিশালী হবে বলে দাবি করছেন তারা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এরশাদের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠসহচর সঙ্গে আলাপকালে বলেন, দলের চেয়ারম্যান পদ নিয়ে শিগগিরই কেটে যাবে জাতীয় পার্টির অস্বস্তি। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি তার অবর্তমানে ভাঙনের মুখে পরুক তা চান না দলের কেউ।
দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এরশাদের সহধর্মিণী রওশন এরশাদও চান দলের সমন্বয়। তিনি সবসময়ই চেয়েছেন জিএম কাদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হোক। পার্টিকে চাঙা করতে কাজ করুক। এজন্য জিএম কাদেরকে তিনি সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন। সম্প্রতি কিছু বিষয়ে মান-অভিমানের ঘটনা ঘটেছে। যেহেতু জিএম কাদের মায়ের মতো ভাবিকে (রওশন) কে শ্রদ্ধা করেন। তিনি যদি দলের কর্মকান্ড নিয়ে এবং যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রওশন এরশাদের মতামত নেন তাহলেই কোনো বিবেদ থাকবে না।
আমি মনে করি, দলের সিনিয়র নেতা হিসেবে রওশন এরশাদের দলের প্রতি অনেক অবদান। জিএম কাদেরসহ সব সিনিয়র নেতাকে সেটি ভাবতে হবে। তাই সংকট নয়, উত্তরণের পথ খুঁজতে হলে রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে। আর সেজন্য দলের সিনিয়র নেতাদের আন্তরিক হতে হবে। প্রয়োজনে নিজেদের স্বার্থকে বিকিয়ে দলের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে।
সিনিয়র ওই নেতা বলেন, তবে আমি মনে করি, বহুভাগে বিভক্ত জাতীয় পার্টি আর ভাঙছে না। সবাই মুখে বড় বড় হুমকি-ধমকি দিলেও এ মুহূর্তে কোনো নেতাকর্মী চান না দল ভাঙতে বা দল থেকে চলে যেতে। কারণ দল ছেড়ে যাবে কোন দলে। আওয়ামী লীগে তো ভালো জায়গা পাবে না। আর বিএনপির অবস্থা তো বেহাল। তাই যে যাই বুলক, সবাই চায় একটি সমাধান। আর এজন্য এখন প্রয়োজন সমন্বয়। স্ত্রী রওশন এরশাদ ও ভাই জিএম কাদের মিলে দলটিকে সমন্বয় করলে খুব শিগগিরই সমাধান হবে বলে আশা করি।
হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এক আলোচিত নাম তার প্রমাণ তিনি রেখে গেছেন তার কর্মে। এরশাদের সর্ব শেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তার সহধর্মিণী রওশন এরশাদকে জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা করেছেন এবং ওই পদ থেকে ছোটভাই জিএম কাদেরকে সরিয়ে দিয়েছেন। জিএম কাদেরকে করেছেন জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। দলের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদই রেখেছেন পরিবারের মধ্যে। উপমহাদেশের রাজনীতিতে পারিবারিক উত্তরাধিকারের রাজনীতি চলছে। (স্যার) এরশাদও হয়তো চিন্তা করেছেন, জাতীয় পার্টিকে টিকিয়ে রাখতে হলে পারিবারিক উত্তরাধিকারের বিকল্প নেই। এ বিষয়টি পরিবারের সবাইকে বুঝতে হবে। বিশেষ করে তার স্ত্রী রওশন ও ভাই জিএম কাদের। দুজন সমন্বয় করে দল চালালে দলের গতি ফিরবে; আর না হলে দল একসময় বিলীন হয়ে যাবে।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি তার অবর্তমানে ভাঙনের মুখে পরুক তা চান না তার সহধর্মিণী রওশন এরশাদ। তার ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলীয় সংসদ সদস্যের সঙ্গে আলাপকালে তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তারা জানান, জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রওশনের এরশাদের সঙ্গে পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
এ বিষয়ে বিরোধীদলের উপনেতার ঘনিষ্ঠজন বলে পরিচিত পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমাম এমপি বলেন, আমরা জিএম কাদেরের বিপক্ষে নই। আমরা সবাই রওশন এরশাদ ও জিএম কাদেরকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। ম্যাডামের (রওশন) এ বয়সে চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। উনি চান সম্মান। জিএম কাদের তার সঙ্গে পরামর্শক্রমে দল পরিচালনা করবেন এটাই ম্যাডামসহ সবার প্রত্যাশা।