গত চার দিনের প্রবল বর্ষণ ও সীমান্তের ওপার থেকে আসা পাহাড়ী ঢলে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ২০টি গ্রামের ৫ হাজার পরিবারের ঘর-বাড়ি প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। প্লাবিত গ্রাম গুলোর কাঁচা ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট, রোপা আমন ধানের বীজতলা, সবজি, পুকুরের মাছ পানিতে তলিয়ে গেছে। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত ছিল।
বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন চাঁন বলেন, গত চার দিন ধরে ঝিনাইগাতী উপজেলায় থেমে থেমে ও মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। সেই সঙ্গে উজান থেকে সীমান্তের ওপার থেকে আসা পাহাড়ী ঢলে ঝিনাইগাতী সদর, ধানশাইল, মালিঝিকান্দা, হাতিবান্দা, গৌরিপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় দশ হাজার পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। তবে তার ইউনিয়নের আটটি গ্রামের সিংহভাগ পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। এসব গ্রামের রোপা আমন বীজতলা, সবজি, পুকুরের মাছ পানিতে তলিয়ে গেছে।
ধানশাইল ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল, গৌরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান মন্টু, মালিঝিকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম তোতা জানান, তাদের ইউনিয়ন গুলোর প্রায় ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে আমন ধানের বীজতলা, পুকুরের মাছ পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দীও রয়েছে কয়েক হাজার পরিবার।
সদর ইউনিয়নের কালিনগর গ্রামের গৃহবূধু রসুনারা বেগম বলেন, গতকাল রবিবার ও আজ সোমবার দুইদিন ধরে ঘরের মেঝে ও চুলায় পানি উঠেছে। তাই রান্নাও করতে পারি নাই। পোলা-পান (বাচ্চা) নিয়ে শুকনো খাবার খেয়ে আছে। তবে গৃহপালিত পশুগুলো শুকনো খড় ছাড়া অন্য কোন খাদ্য খেতে পায়নি। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধির পক্ষ থেকে তাদের কোন খোঁজ-খবর নেননি কেউ।
সারিকালিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সোমাইয়া, ফয়সাল জানান, বৃষ্টি ও ঢলের পানির জন্য গত তিন ধরে বিদ্যালয়ে যেতে পারেন না তারা।
সুড়িহারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা স্বপ্ন দত্ত বলেন, তার বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ ছিল বৃহস্পতিবার।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ঢলের পানিতে ১৫ হেক্টর জমির সবজি ও ২৫ হেক্টর রোপা আমন ধানের বীজ তলা নিমজ্জিত আছে। আজকের ( বৃহস্পতিবার) মধ্যে পানি নেমে না গেলে ক্ষতির সম্ভাবনা আছে বলে জানান তিনি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবু সিরাজুস সালেহীন বলেন, ১০ থেকে ১৫ হেক্টর জমির ৫০ থেকে ৬০টি পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদ বলেন, ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। তবে আজকের মধ্যে পানি নেমে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএমএ আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম বলেন, আমি বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করেছি। পাঁচটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। অবস্থার উন্নতি না হলে বন্যার্তদের মাঝে শুকনো খাবারসহ তাদের জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।