শেরপুরে জিসিও কোর্টে সরকারের (সিও ডেভলপম্যান্ট কর্তৃপক্ষ) দায়ের করা একটি পিডিআর (পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি) মামলার বিবাদীকে লভ্যাংশের টাকা বুঝিয়ে দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন জেলা প্রশাসনের জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান শাওন। চলতি বছরের ২২জানুয়ারী জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুবের নির্দেশে জিসিও’র দায়িত্ব পেয়ে চলমান ও নিষ্পত্তি করা প্রায় ৫২০টি মামলার নথি পর্যালোচনা করে ২০১১ সালে নিষ্পত্তি হওয়া এ মামলার বিবাদীর পরিশোধ করা ১লাখ টাকার ৩০ হাজার টাকা লভ্যাংশ বুধবার (২৬জুন) বিবাদী সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ মাসুদের হাতে তুলে দেন জিসিও মোস্তাফিজুর রহমান শাওন।
তথ্য মতে, ১৯৭৮ সালে শেরপুর জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার জনাব মোঃ মাসুদ শেরপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা কম্যান্ডের কল্যাণের জন্য তাঁতশিল্প স্থাপনের জন্য তৎকালীন সরকারের শেরপুর জেলার সিও ডেভলপম্যান্টের থেকে ঋণ গ্রহণ করেন। দীর্ঘ সময়েও ওই ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় ২০০৭ সালে পিডিআর এক্টে শেরপুরে জিসিও কোর্টে মামলা দায়ের হয়। পরে দুই কিস্তিতে ১ লাখ টাকা জমা দিয়ে বিবাদী মোঃ মাসুদ আইন অনুযায়ী মামলা পরিচালনা করেন। দীর্ঘ ৪ বছর মামলা পরিচালনা করেও ২০১১ সালে মামলায় হেরে তিনি সরকারি সকল অর্থ চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দেন।
শেরপুরের জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “আমাকে জিসিও শাখার দায়িত্ব দেওয়ার পরে জেলা প্রশাসক জনাব আনার কলি মাহবুব স্যারের নির্দেশনায় প্রথমেই শাখার স্থবিরতা কাটিয়ে গতিশীল করার চেষ্টা করি। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে এই মামলা সম্পর্কে জানতে পারি। পূর্বে ব্যাংকে চাকরি করার অভিজ্ঞতার কারণে খুব সহজেই বুঝতে পারি, মামলার বিবাদী ২০০৭ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ব্যাংকে ১ লাখ টাকা ডিপোজিট করে মামলা পরিচালনা করলেও সেই একাউন্ট থেকে কোন লভ্যাংশ নেওয়া হয়নি এবং মামলায় হেরে গিয়ে খাতক (বিবাদী) মোঃ মাসুদ তার কাছে দাবীকৃত সকল টাকা পরিশোধ করেছেন।”
বিবাদীর জমাকৃত টাকার লভ্যাংশের খোঁজ করতে ঐ ব্যাংকের হিসেবের স্টেটমেন্ট উত্তলোন করে ২০০৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৪বছরের প্রায় ২৭০০০ টাকা লভ্যাংশ এবং ২০১১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংকের বিভিন্ন খরচ বাদে (হিসেব পরিচালনা ব্যয়) আরো ৩ হাজার টাকাসহ সর্বমোট প্রায় ৩০ হাজার টাকা লভ্যাংশের হিসেব পাওয়া যায়।
জিসিও মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “এই লভ্যাংশের ব্যপারে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানানোর পর বিবাদীকে দ্রুত সময়ের মধ্যে লভ্যাংশের টাকা প্রদান করতে নির্দেশ দেন। এরই ধারাবাহিকতায় মামলার খাতক (বিবাদী) শেরপুর চেম্বারের সাবেক সভাপতি মোঃ মাসুদের মুঠোফোনে তার লভ্যাংশ পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বরাবর আবেদন করতে বলা হয়। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন অফিসিয়াল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে বুধবার (২৬জুন) মামলার বিবাদী মোঃ মাসুদের হাতে তার লভ্যাংশের ৩০ হাজার টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়।”
মামলার নিষ্পত্তি ও চেক হস্তান্তর সম্পর্কে মোস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, ”এমন দৃষ্টান্ত অন্য কোন জেলায় আছে বলে আমার জানা নেই। মূলত শাখার অডিট করতে গিয়ে বিষয়টি আমার চোখে প্রথমে ধরা পরে এবং জেলা প্রশাসক মহোদয় আমাদেরকে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করার যে নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা সেই নির্দেশনা পালন করে চলেছি। এটা সেই নির্দেশনার’ই একটা সফল দৃষ্টান্ত। আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশনায় শেরপুর জেলার উন্নয়নের জন্য সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছি এবং জেলা প্রশাসন, শেরপুর এভাবেই সবসময় স্বচ্ছতা ও জবাদিহিতার মাধ্যমে এই জেলার মানুষের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।”