বিজয় দিবস, পহেলা বৈশাখ, মাহে রমজান কিংবা ঈদে যেকোন উৎসবেই শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সোহাগপুর গ্রামের বিধবাপল্লীর স্বামী সন্তান হারা জায়া ও বিরাঙ্গনাদের পাশে উপহার সামগ্রী নিয়ে দাঁড়ায় জেলা পুলিশ। সকল উৎসবে সন্তানের মতো পুলিশকে কাছে পেয়ে আইনশৃঙ্খলা এ বাহিনী সম্পর্কে সকল ধারণাই পাল্টে গেছে জায়া ও বিরাঙ্গনাদের। শনিবার (২ জুন) ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা পেয়ে জায়া ও বিরাঙ্গনারা এভাবেই তাদের আনন্দ মনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন।
একাত্তরের পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরতা কারণে স্বাধীনতার এতো বছর পরও সেই স্মৃতি ভুলেননি বিধবাপল্লীর জায়ারা। তাই সব সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়ে ভয় সময় সময়ই ছিল। কিন্তু সকল উৎসবের মতো এবারের ঈদুল ফিতরেরও পুলিশের ঈদ সামগ্রী পেয়ে পুলিশ ভীতি ভুলে যাওয়ার কথা জানান জায়া করফুলি বেগম ।
বরাবরের ন্যায় এবারের ঈদুল ফিতরের আগে শনিবার জেলা পুলিশ বিধবাপল্লীর শহীদ জায়া-বিরাঙ্গনাদের মাঝে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করা হয়। এসময় পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম সভাপতিত্বে ঈদ সামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শেরপুরের পুলিশ নারী কল্যান সমিতির সভানেত্রী আলেয়া ফেরদৌসী। এসময় উপস্থিত ছিলেন সহকারি পুলিশ সুপার (নালিতাবাড়ি সার্কেল) জাহাঙ্গীর আলম, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুর খায়ের।
অতিথিরা ৩০ জন জায়া ও বিরাঙ্গনারা মাঝে ঈদ সামগ্রী হিসেবে আতব শাড়ী, চাল, সেমাই ,চিনি, তেল, সাবান, কোমল পানিও, নুডুস, কিসমিস, চকলেট, দুধ, দুই প্রকারের রসগোল্লা, জিলাপি, বুরুন্দা, নিমকি, চকলেটসহ দুটি ব্যাগে করে এই উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়। ঈদ উপহার পেয়ে এবং সকল উৎসবে জেলা পুলিশ সন্তানের মত পাশে দাঁড়ানোতে স্বামী সন্তান হারা জায়া ও বিরাঙ্গনারা আনন্দে কেঁদে ফেলেন।
বিধবা করফুলি বেগম বলেন, যুদ্ধের সময় থাইকাই পুলিশ দেইখা ভয় লাগতো। কিন্তু পুলিশরা যে এতো ভালা হতেই পারে, এখন বুঝতাছি। তারা এহন আমগর সন্তানের মতো । সব সময় আমাগর খোঁজ খরব নেয়। ঈদের পরে আমগর চিকিৎসার লাইগা ডাক্তার নিয়া আসবো বলে শাড়ীর আচল দিয়ে দুই চোখ মুছতে থাকেন।
বিধবাপল্লির নারী মুত্তিযোদ্ধা হাজেরা বেগম বলেন, বৈশাখে,রমজানে ও আইজ ঈদের লাইগা আমগর কতা মনে কইরা মেলা কিছু উপহার আনছে। আমগর সুখে দুখে পুলিশ সুপার সব সমু পাশে দাঁড়ায়। আমগরে মায়ের মত সন্মান শ্রদ্ধা করে। ঈদ কেমনে করমু তার লাইগা স্ত্রীরে লইয়া আগর লাইগা উপহার নিয়া আইছে বলে আনন্দে কেঁদে ফেলেন।
১৯৭১ সালের ২৫ জুলাই পাকবাহিনী ও রাজাকাররা সোহাগপুর গ্রামে অতর্কিত ভাবে আক্রমণ করে। এসময় নিরিহ ১৮৭জন গ্রামবাসিকে হত্যা করা হয়। তখন ৬২ জন নারী স্বামী সন্তান হারিয়ে বিধবা হন। নির্যাতনের শিকার হন ১৪ জন নারী। সোহাগপুর গ্রামের বেনুপাড়ার সমস্ত পুরুষ মানুষকে হত্যা করা হয়। স্বাধিনতার পর বেনুপাড়া নাম বদলে বিধবাপল্লি হিসেবে পরিচিতি পায়। এখন বেঁচে আছেন ২৬ জন বিধবা নারী। এদের মধ্যে নির্যাতনের শিকার ১২ জন নারীকে সরকার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছেন। এছাড়া ৩০জন বিধবা নারীকে সরকারি ভাবে বাড়ি ঘর নির্মাণ কওে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সুপারের সহযোগিতায় নারীদের বাড়ি বাড়ি ফলবান গাছ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। নববর্ষে বিধবা নারীদেও জন্য বড়মাছ, নতুনশাড়ী, মোয়া মুড়ি দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার(এসপি) কাজি আশরাফুল আজিম সাংবাদিকদের বলেন, জয়া ও বিরাঙ্গনারা হলেন দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদের শ্রদ্ধা সন্মান ও ভালোবাসা প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পুলিশের পক্ষ থেকে তাদেরকে উপহার সামগ্রী দেওয়া হয়েছে।