অপছন্দের দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সাজানো মামলার প্রতিবাদে শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জাতীয় সংসদের হুইপের পদ থেকে মো. আতিউর রহমানের অব্যাহতি দাবি করেছেন দলের একাংশের নেতৃবৃন্দ। বুধবার বিকেলে শেরপুর শহরের খরমপুর এলাকাস্থ জেলা কৃষক লীগের অস্থায়ী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জেলা কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ছানুয়ার হোসেন এ দাবি করেন।
লিখিত বক্তব্যে ছানুয়ার হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন বিশ্বের মানচিত্রে একটি উন্নয়নশীল মডেল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে, ঠিক তখন হুইপ আতিউর রহমানের স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা হীনকর্মকা-ে জেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ ও দলের সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অবমূল্যায়নসহ নির্যাতন-হয়রানির শিকার হচ্ছেন। দুই দফায় প্রায় ১৬ বছর দলের জেলা কমিটির সভাপতি, টানা পাঁচবার সাংসদ এবং দ্বিতীয় দফায় হুইপ নির্বাচিত হওয়ায় তিনি এখন শেরপুরের রাজনীতিতে সম্পূর্ণ একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর কর্মকান্ডের বিষয়ে মুখ খুলতে গিয়ে আমরা আজ তাঁর বিরাগভাজন বা অপছন্দের লোকে পরিণত হয়েছি।
ছানুয়ার বলেন, গত ১৯ এপ্রিল কৃষকলীগের ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা কৃষক লীগের উদ্যোগে শহরের খরমপুর এলাকার দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আগে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শহর প্রদক্ষিণ শেষ করে ওই অনুষ্ঠানে গিয়ে জড়ো হয়। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা চেয়ারম্যানসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণভাবে ওই অনুষ্ঠানটি শেষ হয়। অথচ মিছিল থেকে হুইপ আতিউরের বিরুদ্ধে অশ্লীল স্লোগানসহ খরমপুর মোড়ে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, যানবাহন চলাচলে বাধা ও ভাঙচুরের তথাকথিত সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, সাজানো ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগ তুলে ক্ষমতার প্রভাবে কৃষকলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতাসহ ২৯ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে সদর থানায় মামলা রেকর্ড করানো হয়েছে। অথচ মামলায় উল্লেখিত কথিত ঘটনার সঙ্গে বাস্তবতার কোন মিল নেই। প্রকৃতপক্ষে আগামী উপজেলা নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের হীনউদ্দেশ্যে হুইপ আতিউর কোন রকম ঘটনা না ঘটার পরও কেবল ক্ষমতার প্রভাবে দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ওই মিথ্যা ও সাজানো মামলা দিয়ে হয়রানির পথ বেছে নিয়েছেন।
এমতাবস্থায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার সফল বাস্তবায়নে দলে গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির চর্চাসহ সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এবং প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদাসম্পন্ন সংসদের হুইপের পদটির অপব্যবহার করে তার অবমূল্যায়ন করায় তা দল ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্টের কারণে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হুইপের পদ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য ছানুয়ার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবীর, জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, জেলা কৃষকলীগের সভাপতি আব্দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিজু , যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনসহ নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত বক্তব্যকে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তকর হিসেবে মন্তব্য করে হুইপ আতিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মিছিলের নামে শহরে অস্থিতিশীল সৃষ্টি করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে মামলা করেছেন। দীর্ঘদিন যাবত আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে এরা এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত এবং জেলা বাসকোচ মালিক সমিতিকে জিম্মী করে রেখেছে। এরাই বিভিন্ন স্বেচ্ছাচারী কর্মকান্ডের মাধ্যমে শেরপুরকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে।