২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভের পর থেকে দেশে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে। এ মাস এলেই সারা বিশ্বের মাতৃভাষা প্রেমীদের মনে নাড়াদিয়ে ওঠে একুশের চেতনা। প্রানে জেগেওঠে বাংলাভাষা শহীদদের ত্যাগের কথা। আবাল-বৃদ্ধ-বণিতার মনে প্রাণে বাজতে থাকে সেই ঐতিহাসিক ভাষার গান-‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি?’
কিন্তু ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ ৬৭ বছর অতিক্রম হলেও দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মান করা হয়নি। ফলে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিশু শিক্ষার্থীরা কলাগাছ, বাঁশ ও রঙিন কাগজ দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা সরজমিনে ঘুরে দেখা গছে, জালালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বানেশ্বরদী উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ও বঙ্গবন্ধু বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে তিন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা কলাগাছ, বাঁশ কেটে রঙিন কাগজে মুড়িয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে সেখানে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করছে।
উপজেলার একমাত্র অষ্টম শ্রেণীতে উন্নতি করণ পাইলট প্রকল্পের বানেশ্বরদী উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর মারিয়া, ৫ম শ্রেণীর লামিয়া, ৬ষ্ঠ শ্রেণীর জুঁই ও কাউসার, ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মীম ও বাবুল জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে বাঁশ, কাঠ, কলাগাছ ও কাগজ দিয়ে শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আসছে।
বঙ্গবন্ধু বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মোশারফ হোসেন জানান, ২০০৯ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করার পর থেকেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে সেখানে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়। সরকারি সহায়তা পেলে স্কুল ক্যাম্পাসে স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মান করা হবে বলে তিনি জনান। বানেশ্বরদী উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজহারুল ইসলাম ফিরুজ ও বঙ্গবন্ধু বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামছুন নাহার জানান, শিশু শিক্ষার্থীরা প্রতিবছর বন্ধুরা মিলে নিজে থেকে অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মান করে এবং সেখানে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানায়।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শহীদ মিনার নির্মাণ করার জন্য সরকারিভাবে কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায় না। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই, ওইসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শহীদ মিনার নির্মাণ করে দেয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
নকলা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ আব্দুর রশিদ জানান, নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার চেতায় উদ্বুদ্ধ করতে শহীদ মিনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষদের স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতা নিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের পরামর্শ দিয়ে আসছে শিক্ষা অফিস।
উপজেলা মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, নকলা উপজেলায় ৩০ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার আছে ১৩ টিতে, আর প্রক্রিয়াধিন আছে ৩-৪ টিতে। ২০টি মাদরদসার মধ্যে শহীদ মিনার আছে মাত্র একটিতে। কলেজ রয়েছে ৩ টি, তবে তিনটিতেই শহীদ মিনার রয়েছে। সরকারি ১১৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে শহীদ মিনার আছে ৭টিতে, প্রক্রিয়াধিন আছে ৪-৫ টিতে। অর্ধশতাধিক বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটিতেও শহীদ মিনার নেই। তাছাড়া পাড়া মহল্লায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কেজি স্কুল গুলোতেও নেই শহীদ মিনার।