আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি আমার জীবনকে উৎসর্গ করেছি জনগণের জন্য। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আমার কোনো চাওয়া পাওয়া নেই। জনগণ যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখে আমাদের নির্বাচিত করেছেন, প্রয়োজনে নিজের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে হলেও সমৃদ্ধ ও উন্নত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে যাব।
শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিজয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে আস্থা এবং বিশ্বাস নিয়ে জনগণ আমাকে ভোট দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে; জনগণের সে মর্যাদা আমি রক্ষা করব। প্রয়োজনে আমার জীবন দিয়ে হলেও ভোটের মর্যাদা রক্ষা করব। উন্নত দেশ গড়তে নির্বাচনী অঙ্গীকার অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হবে।
তিনি বলেন, সোনার বাংলাদেশ গড়তে আওয়ামী লীগ সর্বদা কাজ করে যাবে। দল-মত নির্বিশেষে সবার ভাগ্য উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করবে। সকলের তরে, আমরা সকলের জন্য কাজ করব। দেশের আপামর জনগণের কল্যাণ ও তাদের ভাগ্য উন্নয়নে আমরা কাজ করব। প্রতিটি মানুষের উন্নয়নে আমরা কাজ করব। প্রতিটি মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য ও পুষ্টি নিশ্চিতে কাজ করব আমরা। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত একটি উন্নত দেশ।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আগামী ২০২১ সালে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করব। এই সময়ের মধ্যে আমরা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হব। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নত দেশ। আর ডেল্টাপ্ল্যানের মাধ্যমে ২১০০ সালে আমরা স্থায়ীভাবে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর কাতারে পৌঁছে যাব।
এ লক্ষ্যে শেখ হাসিনা দুর্নীতি, মাদকসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন এবং সবার প্রতি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশের মানুষের জন্য কি করতে পারলাম, সেটাই বড় কথা। কী পেলাম, আর কী পেলাম না- তা বড় কথা নয়। আসুন সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করি। আসুন, বর্তমানকে উৎসর্গ করি ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য। এর মাধ্যমেই বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।
এদিকে, ‘গেল নির্বাচনের বিজয় শুধু আওয়ামী লীগের নয়, এ বিজয় স্বাধীনতা শক্তির, আপামর জনগণের’ বলেও উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছেন। জনগণ স্বাধীনতাবিরোধী, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন। এ দেশে কোনো প্রকার সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের স্থান নেই। মনে রাখতে হবে, ঐক্যবদ্ধ শক্তি সবসময় বিজয় অর্জন করে। এ প্রসঙ্গে জয়-পরাজয় নির্বাচনের উপর নির্ভর করে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিজয় পাওয়া যত কঠিন, তার চেয়েও বেশি কঠিন সে বিজয় নিয়ে সফলভাবে কাজ করা। বিশেষ করে উন্নয়নের লক্ষ্যে জনগণের পক্ষে কাজ করা।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে দেশের আপামর জনসাধারণসহ তরুণ প্রজন্ম, নারী, কৃষক-শ্রমিক-তাঁতী, ডাক্তার-আইনজীবী-শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের প্রতি ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা, জাতীয় চার নেতা এবং মুক্তিযুদ্ধে সব শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এর আগে আজ বেলা সোয়া ৩টা নাগাদ সমাবেশস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এসময় স্লোগানে স্লোগানে তাকে স্বাগত জানান দলীয় বিভিন্ন নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আজ সকাল থেকেই ঢাকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন জেলাসহ সারাদেশ থেকে দলে দলে নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা ভিড় করতে থাকেন সমাবেশস্থলে। এতে বিজয় উৎসব ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। সবশেষে উৎসবমুখর এই আমেজ পূর্ণতা পায় প্রধানমন্ত্রীর আগমনের মধ্য দিয়ে।
লাল-সবুজ টি-শার্ট ও মাথায় ক্যাপ পরে হেঁটে বা পিকআপভ্যান, ট্রাক ও বাসযোগে বিভিন্ন সড়ক ধরে উদ্যানের দিকে রওনা হন ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। ৫২ হাজার যুবলীগ কর্মীরাও বাংলাদেশের পতাকা হাতে করে সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
সমাবেশের মূল পর্ব আলোচনা সভা বেলা ৩টা থেকে শুরু হলেও এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকেই সংস্কৃতি মঞ্চে চলে দেশবরেণ্য শিল্পীদের গান ও নৃত্য পরিবেশনা। এ মঞ্চ থেকেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের থিম সং ‘জয় বাংলা, জিতলো আবার নৌকা’ কোরাসে গান পরিবেশন করেন শিল্পীরা।
উদ্যানের ভেতরে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার আদলে তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। মূল মঞ্চটি সাজানো হয়েছে দলের এবারের ইশতেহারের মলাটের রঙে। বৈঠাসহ ছোট বড় ৪০টিরও বেশি নৌকা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ছবি সংবলিত ফেস্টুনে সাজানো হয়েছে সমাবেশ মাঠ।
আওয়ামী লীগের আজকের এই বিজয় সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন- দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোয়ায়েল আহম্মেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মতিয়া চৌধুরী, সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, ফারুক খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, দীপু মনি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের নেতারা ও মন্ত্রী পরিষদের বেশিরভাগ নেতৃবৃন্দ।