“শুধু হুনতাম আমগর পাহাড়ে চা গাছ লাগাইলে, চা গাছের বাগান হবো। কিন্তু কেউ চা চারা আনে নাই। ফনিক্স সাহেব আনছে। চা চারা লাগাইছি। চা গাছ হইছে, গাছে পাতাও আইছে। চায়ের আবাদ হবো এই পাহাড়ে এটা হুনার পর থেকেই স্বপ্ন ছিল চা চারা লাগানোর। চা চারা লাগানোর স্বপ পূরণ হয়েছে। এহন শুধু চা পাতা বেঁচার ট্যাহা (টাকা) খাওনের অপেক্ষা।” সম্প্রতি শেরপুর টাইমসের প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে পাহাড়ে চা চাষের স্বপ্ন পূরণ হওয়ার কথা এ ভাবেই ব্যক্ত করেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গান্ধীগাঁও গ্রামের কৃষক মো. আজিমুল হক আজমত। শেরপুর টাইমস ডটকম’র বিশেষ আয়োজন উন্নয়নে শেরপুরের দ্বিতীয় পর্বে আজ থাকছে সীমান্তের চা চাষ নিয়ে শেরপুর টাইমস’র ঝিনাইগাতী প্রতিনিধি জাহিদুল হক মনিরের বিশেষ প্রতিবেদন।
ভারত সীমান্তঘেঁষা শেরপুর জেলার অর্ন্তগত পাহাড় অঞ্চলে চা চাষের সম্ভাব্যতা উঁকি দেওয়ায় বাংলাদেশ চা বোর্ড এবং চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের একটি বিশেষজ্ঞ দল ২০০৪ সালে জরিপ চালায়। পরে ঝিনাইগাতী উপজেলায় ১৮শ’ ৫৬ একর, নালিতাবাড়ী উপজেলায় ২৫শ’ একর ও শ্রীবরদী উপজেলায় ১১শ’ ৫১ একর জমি চা চাষের উপযোগী ঘোষণা করেন। কিন্ত প্রয়োজনীয় সংখ্যক জমি, অর্থায়ন, উদ্যোক্তা ও সরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা গড়ে উঠেনি। প্রায় ১৪ বছর পর চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ‘গারো হিলস টি কোম্পানী’ নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে তিনটি উপজেলার (ঝিনাইগাতী,শ্রীরবদী,নালিতাবাড়ি) ক্ষুদ্র চাষীদের মাধ্যমে ২৭টি প্রদর্শনী বাগানের জন্য ২৭ হাজার চা চারা বিতরণ কার্যক্রম করা হয়।
গারো হিলস টি কোম্পানী সূত্র জানায়, এ অঞ্চলে বন্যহাতির আক্রমণ ও মাটির ধরনের কারণে এই পাহাড়ী এলাকার জমিতে নিয়মিত ফসলের আবাদ তেমন হতো না। তাই নানা অসুবিধার কারণে চাষিরা ফসল চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছিলেন। চা চাষ তাদের জন্য সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। চা চাষ শুরুর মাত্র ছয় মাসের মধ্যে নতুন নতুন কৃষক চা চাষের আগ্রহ প্রকাশ করছে। ফলে এ কোম্পানি পঞ্চগড় থেকে চা গাছের কাটিং এনে প্রায় ২লাখ চারা উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছেন। আর এচারা রোপণ করা হবে প্রায় ৩৫একর জমিতে।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট’র (বিটিআরআই) সাবেক সহকারী অধীক্ষক এমএ খালেক জানান, এ জেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে চা চাষাবাদের জন্য জমির মাটির গুণাগুণ পরীক্ষার সময় আমি বিশেষজ্ঞ দলের সাথে ছিলাম। এখানকার মাটি, তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত ও অন্যান্য পরিবেশগত অবস্থা চা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বড় বিনিয়োগ ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানেও চাশিল্পের ব্যাপক প্রসার হবে।
উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়নের চেয়ারম্যান মি. নবেশ খকসি বলেন, গারো পাহাড়ে বন্যহাতির আক্রমণে ফসলাদি যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত। আর এজন্য এ এলাকার চাষী ভাইয়েরা ফসল ঘরে তুলতে পারে না। এখন চা চাষ শুরু হওয়ায় চাষিরা চা চাষ করতে অনেক আগ্রহী হচ্ছেন।
গারো হিলস টি কোম্পানীর চেয়ারম্যান মো. আমজাদ হোসাইন ফনিক্স বলেন, এ অঞ্চলের মাটি চা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। তাই ক্ষুদ্র চাষীদের মাধ্যমে ২৭টি প্রদর্শনী বাগানে ২৭ হাজার চা চারা পরীক্ষামূলক ভাবে রোপণ করা হয়েছে। ওই গাছগুলোতে পাতা আসতে শুরু করেছে। তা দেখে এখন অনেক কৃষক আগ্রহী হয়েছে চা চাষে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি চা চাষের মাধ্যমে যে চা উৎপাদন হবে তা শেরপুর জেলা তথা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি গজনী পর্যটনেও একসময় জন্য বড় অবদান রাখবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম বাদশা বলেন, ‘গজনী অবকাশ ও বন্য হাতির আক্রমণে ফসল ও প্রাণহানি হওয়ার কারণে এ অঞ্চলের এক বিশেষ পরিচিত রয়েছে। সেই পাহাড়ি জনপদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সম্পৃক্তায় চা চাষের মাধমে নতুন সৌন্দর্যে সাজতে শুরু করছে । সবুজের পাতায় সৌন্দর্য বৃদ্ধির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরির পাশাপাশি পর্যটনেও আকৃষ্ট করবে এমনটাই আশা করেন তিনি।