গত কয়েক দিনের ভারীবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে শেরপুরের নালিতাবাড়ীর রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের কালাকুমা গ্রামের মাছ চাষী নুর ইসলামের (৫০) সোনালী স্বপ্ন অকাল বন্যায় ভেসে গেছে। বড় দুটি পুকুর তলিয়ে গিয়ে বিক্রি উপযুক্ত প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ওই কৃষক নুর ইসলাম।
ভুক্তভুগি মাছ চাষী নুর ইসলাম জানান, গত বছরের শ্রাবণ মাসে ৮০ শতাংশের একটি পুকুর ও ২০ শতাংশের একটিসহ দুটি পুকুরে দেশীয় তিন জাতের মাছ চাষ করেছিলেন। এগুলো হলো, ৪০ হাজার টাকা মুল্যের ২০ হাজার পাবদা মাছ, ৯০ হাজার টাকা মুল্যের ৬০ হাজার শিং মাছ ও ৩০ হাজার টাকা মুল্যের বাংলা (রুই, কাতলা ও মৃগেল) মাছের পোনা। তিনি মাছ ক্রয় বাবদ ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা খরচ করেন। মাছের চাষ করে স্বপ্ন দেখেন লাভবান হওয়ার। কিন্তু বুধাবার ভোররাতের ভারী বর্ষণ ও চৈত্র মাসের অকাল বন্যায় পুকুরের সব ভেসে যাওয়ায় নুর ইসলামের মাথায় পড়েছে হাত। তার মৎস খামারের মাছের খাদ্য খাইয়েছেন প্রায় ৩ টণ। যার মুল্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। নিজের ক্যাশ ও পারিশ্রমিকসহ প্রায় ৫ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। মাছ চাষের জন্য তিনি স্থানীয় নয়াবিল কৃষি ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ করেছেন। নিজের জমানো টাকা, ব্যাংক ঋণ ও শ্রম বিকিয়ে এখন তিনি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। নুর ইসলাম জানান, মাছ ভেসে যাওয়ার আগের দিনই পুকুরে মেশিন বসিয়ে মাছ বিক্রি করার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু রাতেই ভারীবর্ষণ শুরু হয়। এতে রাতারাতি পুকুরের সব মাছ পানির সাথে ভাটীর দিকে ভেসে যায়। তিনি জানান, বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি পাবদা মাছের দাম ৭ শ টাকা, শিং মাছের দাম ৫ শ ও বাংলা মাছের দাম ১৮০ টাকা করে। যদি দুটি পুকুরের সব মাছ বাজারে বিক্রি করতে পারতেন তাহলে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করতে পারতেন। এখান থেকে খরচ বাদে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা লাভ করতে পারতেন। এমনকি এসব মাছ স্থানীয় এলাকায় আমিষের চাহিদা মিটিয়ে বাইরের জেলাতেও বিক্রি করতে পারতেন। নিজের সম্বল খুইয়ে এখন ব্যাংক ঋণ কিভাবে পরিশোধ করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে নালিতাবাড়ী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা শায়লা শারমীন বলেন, মুলত হঠাৎ ভারিবর্ষণে এমন হয়েছে। আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবো। কৃষক নুর ইসলাম আমাদের মৎস্য অফিসে যোগাযোগ করেনি। করলে হয়তো আমরা তাকে ভাল পরামর্শ দিতে পারতাম। তাই ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য চাষী হিসেবে আমরা তার তালিকা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব। যদি কোন অনুদান পাওয়া যায় তাহলে তা বিবেচনা করা হবে।